কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার রাতের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় নিয়োগ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কমিটি। পরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানান সিভিল সার্জন ও নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাঁর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আমিরুল ইসলাম নিয়োগ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আমিরুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যায় কার্যালয়ে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজল্যুশন তৈরি করে জানানো হয়—অনিবার্য কারণবশত নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী ধাপের বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হবে। রাত ১০টার পর বিজ্ঞপ্তিটি কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে শনিবার সকালে চাকরিপ্রত্যাশীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর তালা খোলা দেখতে পাওয়া যায়। কার্যালয়ের কর্মীরা জানান, কে বা কারা তালা খুলেছে তা জানা যায়নি। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, তাঁরা তালা খোলেননি; হয়তো কার্যালয়ের লোকজন ভেঙেছেন।
কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১১৫টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও প্রক্রিয়াটি শেষ হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে স্বাস্থ্য সহকারী ৯৭, পরিসংখ্যানবিদ ৩, কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান ১, স্টোরকিপার ৪, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ১, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ৫ ও চালক ৪ জনসহ মোট ১১৫টি পদে নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আট হাজারের বেশি প্রার্থী অংশ নেন।
অভিযোগ ওঠে, পরীক্ষার আগের রাত ও শুক্রবার ভোরে কিছু চাকরিপ্রার্থী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমামের বাসা ও তাঁর পরিচালিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জড়ো হন। তাঁদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয় এবং সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সিভিল সার্জনসহ একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে দাবি করা হয়। শুক্রবার ভোরে ওই ক্লিনিক থেকে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নারী-পুরুষকে বের হতে দেখা যায়। এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
দুপুরে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের কিছু অভিভাবক সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে আবারও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা পরীক্ষা বাতিল ও পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান। বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে তাঁরা দুটি নতুন তালা এনে ফটকে লাগিয়ে দেন।
দুপুরে সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে, যেখানে তিনি সদস্যসচিব। পরীক্ষার আগের রাতে কার্যালয়ের একটি কক্ষে সব সদস্য মিলে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। যাঁরা এতে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের ফোন বন্ধ রাখা হয়, যাতে কোনো প্রশ্নপত্র বাইরে না যায়। শুক্রবার সকাল আটটার পর প্রশ্নপত্রগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নিয়োগ–সংক্রান্ত কোনো কাজে জড়িত নন। অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ চাইলে তদন্ত করতে পারে।
নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য জানান, সব কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার রাতেই বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। তদন্ত শেষে যদি অনিয়ম প্রমাণিত না হয়, তখন খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশের কাজ চালানো হবে। এর আগে সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

