বরগুনা জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির অভাব বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে কৃষি, নারী ও শিশুস্বাস্থ্যে। এলাকার মানুষ নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।
সরকার এই সংকট মোকাবিলায় নানা প্রকল্প নিয়েছে। তাতে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম’ অন্যতম। বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ ১০ জেলার মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির অধিকার পেতে পারত কিন্তু প্রকল্পটি দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত। বরগুনায় ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজ ও স্থানীয় অসাধু চক্রের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার শিকার হয়েছে। প্রকল্পের কাজ মানহীন, সরঞ্জাম অপর্যাপ্ত, আর অর্থ আত্মসাত হয়েছে। প্রকৃত উপকারভোগীরাই এখন প্রকল্পের সুফলের বাইরে।
উপকারভোগীরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিটি ইউনিটের প্ল্যাটফর্মে প্রথম শ্রেণির ইটের বদলে দ্বিতীয় শ্রেণির ইট ব্যবহার হয়েছে। বালু ও সিমেন্টের পরিমাণও কমানো হয়েছে। অনেক গ্রামে কেবল নীচের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, ট্যাংক, পাইপলাইন বা ফিল্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। তবুও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের সিংহভাগ বিল নিয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে সরকারি অর্থ লুটের ঘটনা।
সুবিধাভোগী বাছাইয়ে দেখা গেছে চরম স্বজনপ্রীতি। পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয় ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়িতে একাধিক ট্যাংক বসানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রকৃত অভাবী মানুষ, যারা সর্বাধিক প্রয়োজন, তারা বঞ্চিত হয়েছে। কিছু গরিব উপকারভোগীর কাছ থেকে চাঁদা বা ঘুষও নেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া স্বীকার করা হলেও পদক্ষেপ যথেষ্ট হয়নি। প্রকল্পের দুর্নীতি ও অবহেলার সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকলে এত নৈরাজ্য সম্ভব হত না। তাই অবিলম্বে তদন্ত জরুরি। যাঁরা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত—ঠিকাদার, কর্মকর্তা বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। প্রকল্পের সুফল যেন প্রকৃত ভুক্তভোগীরাই পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।

