দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয়, ভুক্তভোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী ও কিশোরী। ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অশ্লীল ভিডিও এবং অশালীন বার্তা পাঠিয়ে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে অনেকে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ এমন বিপর্যয়ে পড়েছেন যে পড়াশোনা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি কনফারেন্সেও এই সমস্যা উঠে এসেছে। কনফারেন্সে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেড়েছে। ডাকসু, জাকসু ও রাকসুতে কিছু চিত্রও দেখা গেছে। তবে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবর দেখায়, রাজনীতি থেকে নারীদের দূরে রাখতে সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিং হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অনেক নারী শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থী হননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবণী জামান জ্যোতি একজন জুলাই যোদ্ধা। তিনি জাকসু নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু প্রার্থী হননি। জ্যোতির মতে, “জুলাই আন্দোলনের পর নারীর প্রতি সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিং বেড়েছে। কিছু বিষয় সত্যিই নেবার মতো নয়। ছাত্র সংসদে অংশ নিলে এসব আরও বেড়ে যাবে বলে ঝুঁকি নিইনি।” জ্যোতির মতো অনেকে একই কারণে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না।
এটা জাকসু নির্বাচনের জরিপ থেকেও স্পষ্ট। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের হার প্রায় সমান। অর্ধেক ভোটার ছাত্রী হলেও জাকসু নির্বাচনে মোট ১৫০টি পদে নারী প্রার্থী ছিলেন মাত্র ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপিসহ চারটি পদে কোনো নারী নেই। বেশিরভাগ হলের নির্ধারিত ১৫ পদের কোটা পূরণ হয়নি। আরও হতাশাজনক, ৫৬টি পদে কোনো নারী মনোনয়ন ফরমই তোলেননি।
ঐতিহ্যগত কারণে রাজনীতি ও সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি কমানো সম্ভব হলেও যথেষ্ট ফল পাওয়া যায়নি। প্রধান কারণ, এ বিষয়ে সামষ্টিক কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং সামাজিক নানা বাধা নারীদের হতাশ করেছে। তাই রাজনীতি তো বটেই, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও নারীর অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। হাল আমলে বিভিন্ন বট অ্যাকাউন্ট থেকে নারী হেনস্তার ঘটনা বেড়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় এ ধরনের ঘটনা ব্যাপক হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি ছিলেন নারীরা কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই হারিয়ে গেছেন। যারা আছেন, তাদেরকে মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ যেন রাজপথে নারীর জন্য ‘সাইবার কাঁটা’।
অনলাইনে কিছু ছেলেদের অংশ নারীদের অশ্লীল ভিডিও, ছবি বা বার্তা পাঠিয়ে বিব্রত করে। ফলে নারীরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনো সমাজের জন্য ভালো নয়। নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ছাড়া রাষ্ট্র এগোতে পারে না। বাংলাদেশ মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ এ ধরনের অপচয় বহন করতে পারে না।
নারীর অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের সক্রিয় হওয়ার সময় এখনই। সচেতন পুরুষকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে। তারা প্রথমে কণ্ঠ তুলে সাইবার বুলিং ও স্লাট শেমিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানকেও নারীর প্রতি আরও তৎপর হতে হবে।

