ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আত্মসাৎ হওয়া অর্থ উদ্ধার করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
আজ (রোববার) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আত্মসাৎ হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য দুদকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গাজীপুর অফিসের ইনচার্জ এজিএম মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “সাবেক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা কোম্পানি থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। আমি ১৮ বছর ধরে কোম্পানিতে কাজ করছি। গ্রাহকের টাকা মেচিওর্ড হয়েছে, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। সব টাকা সাবেক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা আত্মসাৎ করেছেন। গ্রাহকরা আমাদের অফিস, আদালত, বাড়ি-বাড়ি, বাজার-বন্দর, এমনকি মসজিদ পর্যন্ত খুঁজে টাকা চাইছেন। চার বছর ধরে আমরা গ্রাহকের টাকা দিতে পারছি না। যারা কোম্পানিতে আছি, আমরা গত কয়েক বছর বেতনও পাইনি। কোম্পানিটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় বীমা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে সরকারকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছি, তারপরও সরকার আমাদের দুর্দশা দেখেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে। প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কর্মী ভুক্তভোগী। অনেককে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের টঙ্গী জোনের জোনাল ইনচার্জ আখতার হোসেন বাবু জানান, “কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে তারা শিল্প-কারখানা থেকে বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। আমরা তিন বছর ধরে বেতন পাইনি। গ্রাহকের টাকা দিতে পারছি না, ফলে নতুন গ্রাহকও পলিসি নিচ্ছে না এবং কমিশনও পাচ্ছি না। পরিবারের সঙ্গে জীবনযাপন কঠিন হয়ে গেছে।”
অভিযোগকারীরা বলেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গ্রাহকের অবদানে কোম্পানির তহবিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছিল। সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ‘ভুয়া খরচ, কাগজে বিনিয়োগ ও ম্যানেজমেন্টের কারসাজি’ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই অর্থের বড় অংশ ‘বিদেশে পাচার করা হয়েছে’। ফলে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক তাদের প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে প্রতিদিন অফিসে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
এর আগে ২৩ অক্টোবর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি জমি ও স্থাপনা অনিয়মের মাধ্যমে ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় কেনাবেচা করেছেন।

