বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ও ভুয়া কাগুজে কোম্পানির নামে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে।
এই বিপুল অর্থ দিয়ে তিনি দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মোট ৫৯৭টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ছায়াতলে থেকেই তিনি বছরের পর বছর এই অর্থ পাচার চালিয়ে গেছেন, অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকেও কার্যত কোনো প্রতিবাদ আসেনি।
বিএফআইইউ জানায়, জাবেদ ২০১৪ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার এবং তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেন শুরু হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনি একের পর এক কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে অস্তিত্বহীন ব্যবসার নামে ঋণ নেন। এই টাকা ধাপে ধাপে বিদেশে পাচার করা হয়—কখনো হুন্ডির মাধ্যমে, কখনো ওভার ইনভয়েসিংয়ের নামে।
শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ২৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন, যার বড় একটি অংশ পরে তার নিজের আরামিট গ্রুপের হিসাবে স্থানান্তরিত হয়।
বিএফআইইউ ও সিআইডির তদন্তে দেখা গেছে, জাবেদ ও তার সহযোগীরা টাকা পাচারে নানা ধরণের লেয়ারিং (money layering) পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যাতে প্রকৃত অর্থের উৎস গোপন থাকে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ৮টি ব্যাংকের ১২টি কোম্পানির হিসাব খোলা হয়েছিল।
অর্থ ছাড়ের আগেই ঋণ অনুমোদন, এক ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অন্য ব্যাংকের দেনা পরিশোধ, নামমাত্র জামানতে শত কোটি টাকার ঋণ—সবকিছুই ছিল এই পরিকল্পিত জালিয়াতির অংশ।
বিএফআইইউ-এর তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি, দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি রয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যের সম্পদগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।
এছাড়া তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে দুবাইয়ে আরও দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।
সিআইডি ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করেছে। তদন্তে জানা গেছে, শুধু দুবাইয়েই তিনি ১২০০ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসব সম্পদের মধ্যে আছে বুর্জ খলিফা, গালফ কমার্শিয়াল, জাবাল আলী ও মারিনা দুবাইয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ এলাকায় কেনা একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ও অফিস ভবন।
জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পূর্ণ তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিএফআইইউ বলছে, আরও কয়েকটি দেশে তার গোপন সম্পদ থাকার ইঙ্গিত মিলেছে।
এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

