শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের অন্যতম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এআইবিএল)-এর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগে প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যাংকের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে এআইবিএল কর্তৃপক্ষ এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে পদপ্রার্থীর কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, মোট ২৪ জন অভিজ্ঞ ব্যাংকার আবেদন করেছিলেন। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত এমডি রাফাত উল্লাহ খানকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গোপনে প্রস্তাব পাঠায়।
ব্যাংকটিতে গুঞ্জন রয়েছে, রাফাত উল্লাহ খান ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের শ্যালক। প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেছেন আরেক ক্ষমতাশালী পরিচালক ও ইসি কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ। এতে মেধা ও যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শীর্ষ পদে নিয়োগের অভিযোগ তীব্র হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকে এমডি পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর অন্তত দুই বছরের ইসলামী ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। তবে রাফাত উল্লাহ খান পূর্বে কোনো ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেননি। ফলে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন—তিনি কীভাবে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার আগে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। অভিযোগ আছে, লিজিং কোম্পানি থেকে আসার সুবাদে তিনি লঙ্কাবাংলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০০ জনকে এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অনেকের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নেই। এসব নিয়োগে অনিয়ম এবং নিয়োগ বাণিজ্যের গুঞ্জন ব্যাংকের ভেতরে তীব্র হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও এআইবিএলের অবস্থার অবনতি স্পষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সিএএমইএলএস রেটিংয়ে ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি ও আয়-এর রেটিং ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ থেকে ‘৪ বা প্রান্তিক’ পর্যায়ে নেমে গেছে। সামগ্রিক রেটিং ‘২ বা সন্তোষজনক’ থেকে ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ হয়েছে।
৩০ জুন, ২০২৫-এর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা হার ৯.৮৩% থেকে কমে ৯.০২%-এ নেমেছে। এটি ব্যাংকের ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা হ্রাস করছে এবং ভবিষ্যতে মূলধন সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, রাফাত উল্লাহ খানকে এমডি পদে অনুমোদনের জন্য একটি প্রভাবশালী গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকে অবিরাম তদবির চালাচ্ছে।

