জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের অনুদানের নামে আত্মসাৎ, কর ফাঁকি ও ৪৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়, তার বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন। অনুমোদিত মামলায় আসামিরা হলেন:
১. সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিআরআই চেয়ারম্যান সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়,
২. সিআরআই ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা হোসেন ওরফে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,
৩. শেখ রেহানার ছেলে ও সিআরআই ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক,
৪. সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল,
৫. ট্রাস্টি ও সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ,
৬. এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামস,
৭. সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া এবং
৮. সাবেক সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জনকল্যাণের নামে প্রতিষ্ঠিত সিআরআইয়ের অনুকূলে ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে অবৈধভাবে সংগ্রহ করেন। এছাড়া ২০১৩–১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৩–২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা আয় করে। সিআরআই কর্তৃপক্ষ ব্যয়ের হিসাব দেখিয়েছে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা। কিন্তু হিসাব অনুযায়ী তাদের কাছে থাকা উচিত ছিল ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা। অথচ ব্যাংক হিসাবে পাওয়া যায় মাত্র ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। ফলে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে।
সন্দেহজনক লেনদেন ও কর ফাঁকি: দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিআরআইয়ের নামে পরিচালিত ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭০ টাকা জমা এবং ১৯১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৪৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া Income Tax Ordinance 1984 অনুযায়ী আইন ভঙ্গ করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে। এই অর্থ পরবর্তীতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়।
আইনি ধারা ও অপরাধের প্রমাণ: দুদক জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে— আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর ফাঁকি, অনুদান আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

