রাজশাহীর তিন উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা সৌরচালিত পাতকুয়া কার্যত নিষ্ক্রিয়। ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০টি পাতকুয়া থেকে স্থানীয় কৃষকরা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে তারা অতিরিক্ত খরচ করে সেচের পানি সংগ্রহ করছেন।
রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প’ নেওয়া হয়। এতে রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও পবা উপজেলায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ২০টি সৌরবিদ্যুৎচালিত পাতকুয়া নির্মাণ করা হয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।
চারঘাটে ৫টি, পবায় ১১টি, পুঠিয়ায় ২টি এবং বাঘায় ২টি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়। বিএমডিএর হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি পাতকুয়া সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারবে। তবে বাস্তবে প্রতিটি পাতকুয়া থেকে মাত্র দু-একজন কৃষকই সুবিধা পাচ্ছেন। বিএমডিএ জানিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় পানির দাম ৫ টাকা হলেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ ৫০-১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ, সেচে ব্যবহার এবং স্তর পুনঃপূরণ। সেচের আওতায় আসা জমি ১৪৫৭ হেক্টর।
কৃষকেরা বলছেন, প্রকল্পের মূল ধারনা অনুযায়ী স্থানীয় কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজের সুবিধার্থে পাতকুয়া ব্যবহার করছেন। চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নের বাসুপাড়া এলাকায় দেখা যায়, কৃষকরা শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে সেচ দিচ্ছেন। পাশের পাতকুয়া থেকে পানি ব্যক্তিগত ব্যবহারে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, “দুই পাতকুয়া এনামুল হক ও তার ভাই দখল করে রেখেছে। কমিটি গঠিত হয়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে আমরা খরচ বাড়িয়ে সেচ দিতে পারি না।” পাতকুয়া পরিচালনায় নিয়োজিত এনামুল হক স্বীকার করেছেন, “সরকার আমাদের দুই ভাইকে পাতকুয়া দিয়েছে। বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করেছি। কমিটি নেই, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নিয়মও জানি না।”
চারঘাটের পাইটখালি এলাকার পাতকুয়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত আশরাফুল ইসলাম নিজের সুবিধামতে পরিচালনা করছেন। স্থানীয় কৃষক লালন আলী বলেন, “পানি বণ্টনের কমিটি থাকা দরকার ছিল। কেউ তা করেনি। প্রতি ঘণ্টায় ৬০০-৭০০ টাকা খরচ নিয়ে সেচ দিতে হয়। তাই পাতকুয়া ব্যবহার কম।”
আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পানি ধীরে আসে। বাজারমূল্য অনুযায়ী মূল্য নেওয়া হচ্ছে। কমিটি না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। পুঠিয়ার মাড়িয়া বিলেও একই অবস্থা। কৃষক মেহেদী হাসান জানান, “সৌর বিদ্যুতের পানি সস্তা হওয়া উচিত ছিল। তবে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ কৃষক সুবিধা পাচ্ছে না।”
কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, “পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে কৃষকের সুবিধার জন্য। তবে অনেকে পানি পান করছেন না। বিএমডিএ বিষয়টি দেখভাল করছে।” বিএমডিএ’র চারঘাট ও পুঠিয়ার সহকারী প্রকৌশলী হানিফ শিকদার জানান, “কৃষক কমিটি হয়েছে। কাগজপত্রে জানা যাবে কে কমিটিতে আছেন। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

