রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যা করে লাশ ২৬ টুকরো করার আগে হত্যাকারী জরেজুল ইসলাম প্রচুর ইয়াবা সেবন করেন। পরে জ্ঞানহীন অবস্থায় হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আশরাফুলকে হত্যা করা হয়। লাশ পাশের ঘরে রাখা হয়, আর জরেজ ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার (৩৩) অন্য ঘরে রাত কাটিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব-৩ শামীমাকে আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, শামীমা কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে ১৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। তিনি হত্যার পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে আশরাফুল রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ব্যবসায়িক পাওনা আদায় করতে তিনি জরেজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১২ নভেম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকা থেকে পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল ড্রাম থেকে ২৬ টুকরা করা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে মরদেহ শনাক্ত করা যায়—এটি নিখোঁজ আশরাফুল হকের লাশ।
শামীমার মোবাইল এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জরেজ ও শামীমার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শামীমা আশরাফুলকে আকৃষ্ট করে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলে। ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় এসে তারা শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে আশরাফুলকে সরবতে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয় এবং অচেতন হওয়ার পর জরেজ তাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে।
শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগায়। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। লাশ পাশের ঘরেই রেখে দু’জন রাত কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। দুপুরে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করে; পরে মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে তারা ড্রাম দুটি সড়কের পাশের গাছতলায় ফেলে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলে। এরপর থেকে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।শামীমার তথ্য অনুযায়ী, শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি না—তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে। গ্রেপ্তার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে।

