কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে অপহরণকারীরা গত এক বছরে আরো সক্রিয় হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর টেকনাফে কমপক্ষে ২০০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় কিছু গ্রামে রাতের বেলা লাঠি হাতে গ্রামবাসী পাহারা দিচ্ছে।
উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কয়েক সপ্তাহ ধরে একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ভুক্তভোগী প্রাণভয়ে মামলা করতে পারেননি। টেকনাফে পাহাড়কেন্দ্রিক কমপক্ষে ১০টি সশস্ত্র অপহরণকারী চক্র রয়েছে। এসব চক্রে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়রা মিলিত রয়েছে, মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩০০।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছালেহ, সালমান শাহ, পুতিয়া, শফি ও মনিয়া চক্র বেশি সক্রিয়। শফি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও তার চক্রের সদস্যরা এখনও কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব চক্র দেশি ও বিদেশি অস্ত্র এবং অভিনব কৌশল ব্যবহার করে। পাহাড়ে তাদের ভ্রাম্যমাণ আস্তানা রয়েছে, যা পুলিশ অভিযানের আগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
স্থানীয় অপহরণকারী চক্র হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ে ভ্রাম্যমাণ আস্তানা গড়ে দিয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়নের উলুচামারীর চক্রের নেতৃত্বে আছে জালাল উদ্দীন ওরফে লাশ জালাল, দুই ভাই আবুল আলম ও শাহ আলম, মো. হারুন, মো. গিয়াস ও আনোয়ার ওরফে লেড়াইয়া।
টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইতোমধ্যেই আটজন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। অপহরণকারীরা পথচারী, শ্রমিক, জেলে, কৃষক ও শিশু-কিশোরদের আটক করে মুক্তিপণ দাবি করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের অর্থ সীমাবদ্ধতার কারণে ভুক্তভোগীরা দিন কাটাচ্ছে।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও অপহৃতদের উদ্ধারে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় ৩০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩০ নভেম্বর বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালি পূর্বপাড়ায় খেলার সময় চার কিশোরকে অপহরণ করা হয়। পরিবারের ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে চারজনকে উদ্ধার করা হয়, বাকি চারজনকে চক্রের হাতে বেদম মারধর করা হয়। অপহৃতদের মধ্যে রয়েছেন মো. মামুন (১৭), আনোয়ার হোসেন (১৪), গিয়াস উদ্দিন (১৫) ও আবু বক্কর ছিদ্দিক (১৩)।
মৌলভী জমির হোসেন বাহারী জানান, অপহরণকারীরা পরিবারের কাছে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গ্রামের মানুষ এখন রাতে বের হতে ভয় পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ১৫ দিন আগে তার ফুফাতো ভাইসহ তিনজন অপহরণের শিকার হলেও পরিবারের অর্থ দিয়ে তারা ফিরে এসেছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকায় ১৩১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উখিয়া থানায় ৯২টি ও টেকনাফ থানায় ৩৯টি মামলা হয়েছে।
টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, চারটি ইউনিয়নের পাহাড়বেষ্টিত ও দুর্গম এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও স্থানীয় দুর্বৃত্তরা অপহরণ চালাচ্ছে। তবে অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অনেক অভিযোগ করা হয়নি।

