Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sun, Dec 7, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » কারাগারে সিগারেট যেনো বিকল্প মুদ্রা, মুঠোফোনেই অপরাধের নেটওয়ার্ক
    অপরাধ

    কারাগারে সিগারেট যেনো বিকল্প মুদ্রা, মুঠোফোনেই অপরাধের নেটওয়ার্ক

    মনিরুজ্জামানDecember 7, 2025Updated:December 7, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    দেশের দুটি প্রধান কারাগার—কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার—প্রভাবশালী ও শক্তিশালী বন্দীর উপস্থিতির কারণে বিশেষভাবে পরিচিত। কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারির মাঝেও এই দুই কারাগারে বন্দীরা অবৈধভাবে মুঠোফোন ব্যবহার করে বাইরের মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন।

    কেউ কেউ রাজনৈতিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি কারাগার ভেঙে পালানোর মতো পরিকল্পনাও করেছিলেন। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উন্মোচন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেও প্রদান করা হয়েছে।

    প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক মাস আগে এই দুটি কারাগারে বন্দীরা অন্তত ৩৬০টি মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করছিলেন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৭৯টি এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৮১টি নম্বর ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব অবৈধ কার্যক্রমে কারাগারকে মুঠোফোনের মাধ্যমে অপরাধ ও অরাজকতা নিয়ন্ত্রণের নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তোলায় কিছু অসাধু কারা সদস্যের যোগসাজশ রয়েছে।

    কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীরা লুকিয়ে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট মুঠোফোন ঢুকিয়ে ব্যবহার করছেন। একশ্রেণির অসাধু কারারক্ষী এবং কিছু পুরোনো বন্দী এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, “বন্দীরা টাকার বিনিময়ে মুঠোফোন রাখছে এবং প্রয়োজনমতো বাইরে যোগাযোগ করছে।”

    এসবির (পুলিশের বিশেষ শাখা) নজরদারিতে জানা গেছে, এই বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় ও কাশিমপুর কারাগারের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছে। কারাগার দুটির সঙ্গে সংযুক্ত এবং পার্শ্ববর্তী বেস ট্রান্সসিভার স্টেশনের মাধ্যমে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫২টি মুঠোফোন নম্বরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিশ্লেষণে ৩৬০টি নম্বর অবৈধভাবে নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে বলে চিহ্নিত হয়েছে। পুলিশ জানায়, অবৈধ মুঠোফোন সরবরাহে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    অনুসন্ধানেও পাওয়া গেছে, বন্দীরা টাকা দিয়ে সার্বক্ষণিক মুঠোফোন রাখছেন। কেউ যখন ইচ্ছে করে তখন বাইরে কল করতে পারেন। কাশিমপুর কারাগারে বন্দী থাকা এক আসামি তাঁর মামলার বাদীকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ঢাকার একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এসবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আলোচিত অপরাধীরা মুঠোফোন ব্যবহার করে বাইরের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। শুধু কল নয়, ইন্টারনেট সুবিধাসম্পন্ন ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে বাইরে যোগাযোগও চালানো হচ্ছে।

    গত ছয় মাসে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়া একজন নারীসহ -সাতজন এর সাথে আলাপচারিতায় এসব তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানান, কারাগারে অবৈধ ফোন ব্যবহারের জন্য মাঝে মাঝে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আগের মতো ফিরে আসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারামুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, “বন্দীদের মধ্যে বিভিন্ন সেলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও কিছু অসাধু কারারক্ষী টাকার বিনিময়ে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। কখনো ৫০০ টাকায় ১০-১৫ মিনিট কথা বলা যায়। কখনো পিসি কার্ড থেকে টাকা নেয়, আবার কখনো সিগারেটের প্যাকেটের বিনিময়েও ফোন ব্যবহার করা যায়।” একটি সূত্র জানিয়েছে, এমন উদাহরণও আছে যেখানে বিগত আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছর কারাগারে থাকা এক বন্দী ফোনে বাইরে যোগাযোগ রেখে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। কারাবাসের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তিনি বাইরের পছন্দের খাবারও খেয়েছেন।

    কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন  জানিয়েছেন, অবৈধ মুঠোফোন ব্যবহার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে বা নানা কৌশলে খুবই ছোট ফোন ভেতরে ঢুকছে। অনেক সময় স্ক্যানারেও তা ধরা পড়ে না। একশ্রেণির অসাধু কারারক্ষী এবং পুরনো কিছু বন্দী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।”

    কারাগারে সিগারেটই বিকল্প মুদ্রা:

    জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরুষ সেলগুলোতে সরাসরি নগদ টাকা ব্যবহার করা যায় না। তাই সিগারেটের প্যাকেটই সেখানে বিকল্প মুদ্রা। বিভিন্ন অবৈধ কাজে সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে লেনদেন হয়। হলিউড সিগারেটের প্যাকেট ১৬০ টাকা, গোল্ডলিফ ৩০০ টাকা এবং বেনসন ৪০০ টাকা ধরে ব্যবহার করা হয়। বন্দীরা পিসি কার্ড দিয়ে সিগারেট কিনে পরে তা খায় না। বরং অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য সেলের দায়িত্বে থাকা বন্দী এবং কারারক্ষীদের হাতে প্যাকেটগুলো তুলে দেন।

    কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন  বলেন, সিগারেটকে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা ঠেকাতে উচ্চমূল্যের সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কিছু অসৎ কারারক্ষী এই মুঠোফোন চক্রে জড়িত ছিলেন। তারা কয়েদিদের মুঠোফোন সরবরাহ করতেন এবং নানা ধরনের সহযোগিতা দিতেন। প্রতিবেদনে নয়জনের নাম এসেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সংলগ্ন একটি মহিলা কারাগারসহ তিনটি কারাগারে কর্মরত আছেন।

    কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে মোট চারটি কারাগার রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১০ হাজার বন্দী থাকেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্ধর্ষ ও আলোচিত বন্দীদেরও এখানে আনা হয়। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন ৯ হাজারের বেশি বন্দী। এর মধ্যে ১৩০ জন ফাঁসির আসামি।

    এই কারাগার থেকেই সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া এক ব্যক্তি জানান, “সিগারেটের প্যাকেট দিলেই সব ম্যানেজ হয়ে যায়। কারারক্ষী, ইনচার্জ এবং ফোন রাইডার—সবাই যোগসাজশে কাজ করে। তবে নিয়মিত কাছে মুঠোফোন রাখতে চাইলে বড় অঙ্কের টাকা লাগে।” পুরুষ সেলগুলোতে সিগারেটকে মুদ্রার মতো ব্যবহার করার বিষয়টি তিনি বরাবরই দেখেছেন। প্যাকেট অনুসারে নির্ধারিত ‘মূল্য’—হলিউড ১৬০ টাকা, গোল্ডলিফ ৩০০ টাকা এবং বেনসন ৪০০ টাকা—এসবই সেখানে প্রচলিত হার।

    কারাগারে ফোন ঢোকানোর বিচিত্র কৌশল, বাড়ছে ঝুঁকি ও অনিয়ম:

    কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার সূত্র জানায়, গত জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাসে কারাগার থেকে উদ্ধার হয়েছে ৯৭টি মুঠোফোন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও উদ্ধার হয়েছে ৭০টির বেশি ফোন। এসব ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বন্দীরা পায়ুপথে বিশেষ কৌশলে ছোট আকারের ফোন ভেতরে নিয়ে আসেন। একটি ঘটনায় দেখা যায়, একজন বন্দী একসঙ্গে দুটো মুঠোফোন পায়ুপথে এনেছেন। আবার এক বন্দী একইভাবে ফোন আনলেও সেটি বের করতে না পেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে নিতে হয়।

    কারাগার সূত্র জানায়, আরেকটি প্রচলিত উপায় হলো—বাইরে থেকে মাদক ও ছোট আকারের মুঠোফোন বিশেষভাবে পেঁচিয়ে বলের মতো করে ভেতরে ছোড়া। এই কাজেও কারারক্ষীসহ ভেতরের কিছু ব্যক্তির সহযোগিতা থাকে। এসবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসাধু কারারক্ষী ও কর্মচারীরা অর্থের বিনিময়ে ফোন সেট ও সিম কয়েদিদের হাতে পৌঁছে দেন। খাবার, ওষুধ, জুতা বা উপহারের ভেতরেও চতুরতার সঙ্গে মুঠোফোন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

    হাইসিকিউরিটি কারাগার সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে নিরাপত্তা ও সার্বিক তদারকিতে প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা‑কর্মচারী কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত বলে ধারণা পাওয়া গেছে। অপরাধে ধরা পড়ায় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক কারারক্ষী অন্তর্বাসে মাদক ঢুকিয়ে আনেন—ঘটনার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু একশ্রেণির কারা সদস্য নানা কৌশলে অবৈধ কাজে জড়িয়ে থাকেন।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল‑মামুন বলেন, “বডি স্ক্যানার মেশিনটি নষ্ট থাকায় কিছু মুঠোফোন নানা কৌশলে ভেতরে ঢুকেছে। কর্মরত কেউ এ কাজে সহযোগিতা করে থাকতে পারে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ফোন জব্দ করছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশের প্রতিবেদন পেলে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কারাগারের অভ্যন্তরেও ফোন লুকানোর নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শৌচাগারের নিচু কমোডে ছোট ফাটল তৈরি করে ফোন রাখা হয়। অনেক সময় কমোডের ফ্লাশ পাইপে পলিথিনে মুড়িয়ে মুঠোফোন গুঁজে রাখা হয়।

    বিশেষ কৌশলে দেয়াল ও শৌচাগারে লুকানো হয়:

    কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্দীরা একাধিক কৌশলে একই মোবাইল সেট বা সিম বিভিন্ন হাত বদলের মাধ্যমে ব্যবহার করেন। সাধারণত তারা কাপড়ে ঢেকে, শৌচাগার, গোসলখানায় বা অন্য কোনো স্থানে চুপিসারে ফোনে কথা বলেন। কোনো বন্দী মুক্তি পেলে বা অন্য কারাগারে গেলে সে নিজের ফোন অন্য পরিচিত বন্দীর কাছে দিয়ে যান। কাশিমপুর কারা সূত্র জানায়, শৌচাগারের নিচু কমোডে ছোট ফাটল করে ফোন রাখা হয়। অনেক সময় কমোডের ফ্লাশ পাইপে পলিথিনে মুড়িয়ে লুকানো হয়। আবার মোজার মধ্যে ফোন রেখে দড়ি দিয়ে জানালার বাইরের অংশে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাও ধরা পড়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচিত হাই-প্রোফাইল বন্দীরা নিজেরাই ফোন না রেখে অন্য বন্দীর হাতে রাখেন। কেউ দেয়ালে কুঠুরি করে, কেউ টয়লেটে পলিথিনে মুড়িয়ে ফোন লুকিয়ে রাখেন।

    কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতি মাসেই মুঠোফোন উদ্ধার করা হয় এবং নিয়মিত তল্লাশিও চালানো হয়। তবে কখনো কখনো তল্লাশি শুরু হওয়ার সময় কারা সদস্যরা ফোনগুলো এক সেল থেকে অন্য সেলে সরিয়ে দেন। ফলে কিছু ফোন ধরা পড়ে না। ধরা পড়লে ব্যবহারকারীরা জানায়, এটি জামিনে বের হওয়া অন্য বন্দীর কাছ থেকে পেয়েছেন।

    ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, “কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে, এ অস্বীকার করা যাবে না। এখানে কর্মরত কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারেন। তবে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে বিষয়টি অনেক কমানো হয়েছে। মূল চ্যালেঞ্জ হলো—মুঠোফোন সরবরাহকারীদের শনাক্ত করতে পারা। আমরা এখন সেই দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।”

    কাশিমপুরে কারাগার ভাঙার চেষ্টা ও বন্দীর পরিকল্পনা:

    গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ২ হাজার ৮০০ বন্দী ছিলেন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন ১ হাজার ২৩৩ জন। কারাগার সংক্রান্ত অপরাধ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলায় বেশি করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির নাম উঠে আসে।

    পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও কারাগার সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে আটক কয়েদিরা কারাগার ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক পতিত সরকারের নেতা-কর্মীরা কারাগার ভাঙার পরিকল্পনা করেছেন। গত আগস্টে বাইরে থাকা নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন কারাগারে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

    এসবি ও কারাগার সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পরিকল্পনা অনুযায়ী, আটক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কারাগারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন। এজন্য অন্য বন্দীদেরও উসকানি দেওয়া হয়েছিল।

    এরই মধ্যে হাইসিকিউরিটি কারাগারের তিনজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী জানালা ভেঙে দড়ি বেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তারা কম্বল ছিঁড়ে দড়ি বানিয়ে নিচতলার শৌচাগারের টাইলস সরিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। প্রতি রাতে সামান্য করে গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গটি এত বড় করা হয়, যাতে একজন মানুষ ঢুকতে পারে। তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধরা দিলে তারা পালাতে ব্যর্থ হন। এই ঘটনার পর নিচতলার মেঝের টাইলস তুলে সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ দিয়ে দেওয়া হয়। এসবির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগের কিছু বন্দী অবৈধভাবে মুঠোফোন ব্যবহার করে বাইরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন।

    কারাগার থেকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ:

    পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) জানিয়েছে, অবৈধভাবে ব্যবহার হওয়া মুঠোফোন নম্বরগুলোতে নজরদারি চালিয়ে দেখা গেছে, কারাগার থেকেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত দুই কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে বাইরের অস্ত্র রয়েছে। এগুলো ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার মতো অপরাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারাবন্দী কিছু মাদক কারবারি কারাগারে বসে বাইরের মাদক ব্যবসাও পরিচালনা করেন। এছাড়া কারাগারে থাকা অবস্থায় অনুসারীদের মাধ্যমে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অসৎ কারারক্ষীদের সহায়তায় কারাগারের ভেতরে মাদক প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।

    পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কারাগারে নজরদারির ঘাটতি থাকায় বাইরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও প্রভাব পড়ছে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং মগবাজার-গুলশান-বাড্ডা অঞ্চলের কয়েকটি ঘটনায় বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে এসেছে। কারাবন্দী আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বাইরের অপরাধ পরিচালনা নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েদিদের কাছে ফোন সেট ও সিম সরবরাহকারী অসৎ কারারক্ষী ও কর্মচারীদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এসবি শনাক্ত করা মুঠোফোন নম্বরের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    কারাগারে মুঠোফোন রুখতে জ্যামার ব্যবহারের সুপারিশ:

    কারাগার সূত্র জানায়, নজরদারি ও নিরাপত্তার মূল সমস্যা হলো জনবল ও প্রযুক্তিগত ঘাটতি। দীর্ঘদিনের অপরাধমূলক অভ্যাস থাকা কারা সদস্যদের সংশোধন করা কঠিন হওয়ায় অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানও সহজ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কারাগারের ভেতরে মুঠোফোন ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে জ্যামারের কার্যকরী ব্যবহার, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ জোরদার করা, স্ক্যানার প্রযুক্তি উন্নত করা এবং নিয়মিত তল্লাশি চালানো জরুরি।

    প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েদিদের কাছে ফোন ও সিম সরবরাহকারী অসৎ কারারক্ষী ও কর্মচারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এছাড়া এসবি যে মুঠোফোন নম্বরগুলো শনাক্ত করেছে, তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কারাগারের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের ভেটিং করার সুপারিশও করা হয়েছে।

    কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন  বলেন, “এসবির প্রতিবেদন নজরে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। ব্যাপক অভিযান চালিয়ে মুঠোফোন ব্যবহার অনেক কমানো গেছে, তবে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। প্রযুক্তি, জনবল, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। অতীতে নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও গলদ ছিল, যার কারণে অনুপযুক্ত লোকও এখানে ঢুকে গেছে। তাদের সংশোধন করা এখন কঠিন।”

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অপরাধ

    ‘বড় ভাইদের’ প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হচ্ছে কিশোর গ্যাং

    December 7, 2025
    অর্থনীতি

    মূলধন ফেরত সংকটে বেক্সিমকোর সুকুক, মেয়াদ বৃদ্ধিতে সুপারিশ

    December 7, 2025
    পুঁজিবাজার

    সূচক কমছে, লেনদেন কমছে: গভীর সংকটে শেয়ারবাজারের ভরসা কোথায়?

    December 7, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.