চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন নতুন নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং দখলবাজি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হলে মালিক বা ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। গ্রুপিং-দ্বন্দ্বের কারণে খুনখারাবির ঘটনাও ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে, ‘বড় ভাইদের’ প্রশ্রয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কিশোর গ্যাংয়ের নতুন প্রজন্ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, গ্রুপের নাম ও নেতৃত্ব পরিবর্তিত হলেও দলে নতুন সদস্য যুক্ত হচ্ছে। তারা মাদক সেবনের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অপরাধের পথে আসে। অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হলেও ‘বড় ভাই’রা অধরা থেকে দলের সদস্যদের ছাড়ানোর জন্য থানায় তদবির করেন বা আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করে জামিন নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের নামের মধ্যে রয়েছে: বিঙ্গো গ্রুপ, মাঞ্জিরো টপ, কমার্ড, আয়রন, বিজিবি হল, পেটন, এক্স৯৯৯, এক্সওয়াইজেড, #ট্যাগ, ফুরিউ, এমএস, ডেঞ্জার, ওয়ারিয়র, স্টিল, ক্রিস্টাল, পাইথন, এমবিবিএস (মোহাম্মদপুর বয়েস সিন্ডিকেট), এনএস, কেবি, এমবিএক্স, এক্স-মার্ক, ডট গ্যাং ও ব্ল্যাকহোল গ্যাং।
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব বাড়ে। সদস্যরা দলীয় মিছিলে অংশ নিতেও দেখা গেছে। তারা রাজপথে দলীয় স্লোগান দিয়ে উপস্থিত থাকলেও মূলত দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক, চুরি-ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, চট্টগ্রামের স্কুলে অনুপস্থিত ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশ ১৬-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অপরাধে জড়িত। তারা পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক লেনদেন এবং অনলাইন জুয়ায় যুক্ত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারী মো. সাদিক হোসেন বলেন, হামজারবাগে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা সবসময় টেনশনে থাকে।
গত আগস্টে হামজারবাগে এক তুচ্ছ ঘটনায় একজনকে মারধর করা হয়। ৪ অক্টোবর মুরাদপুরে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনায় এনএস কিশোর গ্যাংয়ের ৮ জন গ্রেপ্তার হয়। ২০২৪ সালের মার্চে নগর পুলিশের জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে প্রায় ২০০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়, সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। ৬ বছর ধরে ৫৪৮টি অপরাধে কিশোর গ্যাং জড়িত এবং ৬৪ জন ‘বড় ভাই’ তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
গত ১৬ মে নয়াবাজারে দুই গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে ‘পাইথন’ গ্যাংয়ের ২২ জন একটি কিশোরকে মারধর করে। ৪ সেপ্টেম্বর হামজারবাগ ও মোহাম্মদপুর থেকে এমবিএসের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার হয়। ২২ সেপ্টেম্বর ‘ডট গ্যাং’ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুম ১৯ বছরের শিক্ষার্থীকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আমিনুর রশিদ জানান, চট্টগ্রামের কিশোর গ্যাং থানাভিত্তিক। তাদের তালিকা প্রতিটি থানার অফিসারের কাছে আছে। অপরাধ দমন ও গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। নির্বাচনী মিছিল-মিটিংয়ে শিশু কিশোররা অংশ নিলে তা অপরাধ নয়; অপরাধ ঘটলে পুলিশ কার্যক্রম চালায়।

