রাজধানীর দক্ষিণখান জয়নাল মার্কেট এলাকায় মোবাইল ছিনতাই, টানাপার্টি ও মলমপার্টির সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে প্রতিটি ওলি গলিতে ছিনতাইকারীরা অবাধে বিচরণ করছে। সন্ধ্যার পর তারা ওতপেতে বসে পথচারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নিচ্ছে।
উত্তরা পূর্ব থানার কসাই বাড়ী রেলগেইটের আশপাশ ও উত্তরখান দক্ষিণখান থানার পাড়া মহল্লার ওলি গলিতেও কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়েছে। সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, জনবল কম ও নানা অযুহাতে পুলিশি কার্যক্রম ঢিলেঢালা। প্রশাসনের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাইকারীরা পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। উত্তরায় হঠাৎ ছিনতাই ও খুনের ঘটনা বেড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নেশার টাকা জোগার করতে বখাটে তরুণরা চুরি, ছিনতাই ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধও করতে দ্বিধা করে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাজের উদ্দেশ্যে সকাল বেলায় বাসা থেকে বের হওয়া পরিবারের সদস্যরা সুস্থভাবে ফিরবে কিনা তা নিয়েও পরিবারের অন্য সদস্যরা টেনশনে থাকে।
গত ১১ ডিসেম্বর জয়নাল মার্কেট বাজার এলাকা থেকে রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তির মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী জানালেন, এলাকা এখন ছিনতাইকারীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে।
দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ছিনতাই প্রবণ এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারেও আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। ছিনতাইকারী চক্রের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোর্শেদ আলম বলেন, “পূর্বের ওসিরা কাজ করেননি। আমরা কাজ করছি। মাদক সেবনকারী ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা ৬ নং সেক্টর, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও বিডিআর বাজারের সামনে পথচারীর জন্য থাকা ফুটপাত ও সড়কের অংশ হকারদের দখলে। আজমপুর এলাকায় বেটারি চালিত অটোরিকশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের এক পাশে গাড়ি পার্কিং, অন্য পাশে হকারদের ভেন গাড়ি রাস্তার অর্ধেক দখল করে রেখেছে। এতে পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরা ৮ নং সেক্টর রেলগেইট, জয়নাল মার্কেট, ফায়দাবাদ এলাকা ও রেললাইনের আশপাশের বস্তিতে ছিনতাইকারীরা বসবাস করছে। তাদের মূল টার্গেট পথচারীর মোবাইল, ঘড়ি, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
মোবাইল ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারিয়ে মানুষ দিশেহারা। উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় অটোরিকশা চুরির ঘটনা বেড়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর রাত ৯ টায় উত্তরখান মৈনারটেক এলাকায় অটোরিকশা চালক মোঃ মকছেদুল ইসলাম (২৭)কে ছুরিকাঘাতে খুন করে অটোরিকশা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। একইভাবে দক্ষিণখান গাওয়াইর এলাকা থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করে অটো চালককে অচেতন করে তাদের গাড়ি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
উত্তরা জয়নাল মার্কেট থেকে আব্দুল্লাহপুর তুরাগ নদী ও ৮ নং রেলগেইট পর্যন্ত এলাকা অরক্ষিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারী গ্রুপগুলো পথচারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে মোবাইল, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে আশপাশের লোকজন বুঝতে পারে না কি হচ্ছে। এডিসি মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, ছিনতাই, চুরি ও মাদকের বিরুদ্ধে থানা পুলিশসহ কাজ চলছে। গ্রেফতারের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, আশা করি পুলিশের আচরণও পরিবর্তন হবে ইনশাআল্লাহ।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অভিযানের মাধ্যমে ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে লিখছেন, ছিনতাইকারীরা লোহার সাবল, ধারালো ছুরি, চাপাতি, রড ব্যবহার করে।
উত্তরায় ছিনতাইকারীরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে এখন তারা দিনে দুপুরেও গণপরিবহনের যাত্রীদের উপর হামলা করছে। থানায় একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পুলিশি উপস্থিতি দেখা যায় না। প্রকাশ্যে খুন, দোকান লুটপাট, পথচারী ও যাত্রীদের উপর ধারালো ছুরি দিয়ে হামলা, চাঁদাবাজি – এসব ঘটনায় উত্তরাবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিবার ও সন্তানদের নিরাপত্তায় উদ্বেগ থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি দাবি করছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা ছিনতাই ও মাদক চক্রকে প্রভাবিত করছে। তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরা ৬ নং সেক্টর জয়নাল মার্কেট, আজমপুর ৪ নং সেক্টর রেলগেইট, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা, আইসি হাসপাতাল ঘাট রেললাইন এলাকায় রাতের বেলায় সড়ক ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশি টহল, সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও চেকপোস্ট বৃদ্ধির প্রয়োজন।

