দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পাবনা শাখায় বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নাবিল গ্রুপের এক কর্মচারীর নামে ‘জামান সিন্ডিকেট’ নামে কাগজে-কলমে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের অর্থ তছরুপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক হাজার ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৮ টাকা বিতরণ করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদেরসহ মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংকিং নীতিমালা ভেঙে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ‘জামান সিন্ডিকেট’ নামের ওই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক হাজার ৪৫ কোটি টাকার বাই-মুরাবাহা টিআর বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন ও সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৮ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৮ টাকা বিতরণ করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থের উৎস ও প্রকৃতি আড়াল করতে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের মালিক ও এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে। এছাড়া তার ভাই ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের মালিক সহিদুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারহোল্ডার মো. আব্দুল্লাহ হাসান, সেঞ্চুরি ফ্লাওয়ার মিলসের এমডি মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাছানুজ্জামান, এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের এমডি মিশকাত আহমেদ এবং চেয়ারম্যান শাহানা ফেরদৌসের নাম রয়েছে।
এ ছাড়া নাবিল গ্রুপের এমডি মো. আমিনুল ইসলাম, মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল রাকিব, এমডি মুবিন আহমেদ এবং জামান সিন্ডিকেটের চেয়ারম্যান রোকুনুজ্জামান মিঠুকেও আসামি করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির যেসব সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমডি মোহাম্মদ মুনিরুল মাওলা, ডিপুটি ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মোহা. শাহজাহান, সাবেক এভিপি মো. আব্দুল আওয়াল, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোকলেসুর রহমান, ইভিডি ও জোনাল হেড মো. মিজানুর রহমান মিজি, সিনিয়র অফিসার মো. শাহীন মাহমুদ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, এসইভিপি মো. আলতাফ হোসাইন, মোহাম্মদ শাব্বির, জিএম মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, রফিকুল ইসলাম, আবু সাইদ মো. ইদ্রিস, ডিএমডি এ এফ এম কামাল উদ্দিন, মো. আকিজ উদ্দিন, কাজী মো. রেজাউল করিম, ইভিপি ফরিদ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিন, এফএভিপি মাসুদ মোহাম্মদ ফারুক, ভিপি মো. মমতাজউদ্দিন চৌধুরী, এভিপি মো. কামরুজ্জামান এবং প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন।
এছাড়া ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ আবু আসাদ, ড. তানভীর আহম্মদ, মো. কামরুল হাসান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর এবং প্রফেসর ড. মো. ফসিউল আলমকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ১০৯ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

