পাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগে আলোচনায় থাকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে নতুন করে আরও ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এসব সম্পদ কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ অন্তত সাতটি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, নতুন পাওয়া ৬১৫টি সম্পদের নথিসহ সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এখন মোট এক হাজার ১০০টির মতো সম্পদের নথি রয়েছে সংস্থাটির হাতে। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি এবং তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। সম্পদগুলো প্রায় ১০টি দেশে অবস্থান করছে। এসব সম্পদের আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
বিএফআইইউ ও দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে পাওয়া ৬১৫টি সম্পদের বেশির ভাগই যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে নতুন করে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে যুক্তরাজ্যেই সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে ৩৪৩টি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৭২৪টি সম্পদের নথি রয়েছে।
এ ছাড়া কম্বোডিয়ায় তাঁর নামে ১১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৮ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় পাওয়া গেছে ৪৭টি সম্পদ। সেগুলোর বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ ডলার।
ফিলিপাইনে তাঁর নামে দুটি সম্পদের তথ্য মিলেছে। এসবের মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯০ পেসো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতে হরিয়ানা ও উত্তর চব্বিশপরগনাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার।
থাইল্যান্ডে সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে ২৪টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এসব সম্পদের মূল্য ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ থাই বাত। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর নামে রয়েছে ৪৪টি সম্পদ এবং দুটি কোম্পানির লাইসেন্স। ভিয়েতনামে পাওয়া গেছে ৩০টি সম্পদের তথ্য। সিঙ্গাপুরে সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে বিএফআইইউর কাছে। সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, আমরা যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছি, তাতে এখন পর্যন্ত তাঁর নামে এক হাজারের বেশি সম্পদের নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নথিতেই ভিয়েতনামে ৩০টি সম্পদের তথ্য রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা জানান, সাইফুজ্জামান জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা তিনি সেসব দেশের এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন। পরে দেশে থাকা প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে সেই টাকা পরিশোধ করা হতো। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, পাচার করা অর্থ দিয়ে জাবেদ ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে সেগুলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়।
পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠাতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি আছে, সেখানে এই প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এমন চুক্তি খুব সীমিত।
তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক, দুদককে সঠিক পথে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যেসব দেশে আমাদের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেসব দেশ দুর্নীতির সূচকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। অথচ পাচারের অর্থ তাদের দেশে গেলে তারা ফেরত দেওয়ার বদলে সুরক্ষার ব্যবস্থা করে। এটি তাদের দ্বৈত নীতিরই প্রকাশ।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। এ লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

