রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক পিএলসি থেকে ২ হাজার ৩২ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে নেওয়া ঋণের অনিয়ম অনুসন্ধানের পর আজ দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থার সদর দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক। ঋণটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা থেকে ছাড় করা হয়েছিল। দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক শোবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংকিং বিধি লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন, নবায়ন ও সীমা বৃদ্ধি করেছেন। পর্যাপ্ত জামানত, লিখিত পরিশোধের অঙ্গীকার বা পরিচালকদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। অনুমোদিত সীমার বাইরে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল।
তদন্তে দেখা গেছে, বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দেখানো হয়েছে, অ্যাকসেপ্টেন্স কমিশন আদায় করা হয়নি এবং প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পুনঃঅর্থায়ন (রিফাইন্যান্সিং) সুবিধা নেওয়া হয়েছে। ঋণের টাকা গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সিসি (হাইপো), এলটিআর, পিএডি ও আইএফডিবিসি সুবিধার আওতায় আসল ও সুদসহ মোট আত্মসাতের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্ত অব্যাহত থাকবে এবং আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে প্রধান আসামি করা হয়েছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুল্লাহ হাসান, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের এমডি আলহাজ মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক ফারজানা বেগম ও মোহাম্মদ আবদুস সবুর, সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শহিদুল আলম, এস আলম ট্রেডিং কোং লিমিটেডের পরিচালক মো. ওসমান গনি এবং কমোডিটি ইন্সপেকশন সার্ভিসেস (বিডি) লিমিটেডের এমডি খন্দকার জহিরুল হক।
অবৈধভাবে ঋণ অনুমোদন ও নবায়নের মাধ্যমে জালিয়াতিতে সহায়তার অভিযোগে জনতা ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সিরাজুল করিম মজুমদার, মো. শহিদুল হক, মো. আবুল মনসুর (শাখা প্রধান), সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. কামরুল আহসান, মো. জাকারিয়া, মাসফিউল বারী ও মো. কামরুজ্জামান খান; সাবেক প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) এ কে এম শরীয়ত উল্লাহ এবং সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আবদুল জব্বার, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. ইসমাইল হোসেন।
অনিয়ম জেনেও ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন বা বাধা না দেওয়ার অভিযোগে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও মামলায় অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, ড. এস এম মাহফুজুর রহমান এবং সাবেক পরিচালক খন্দকার সাবেরা ইসলাম, অজিত কুমার পাল, কে এম শামসুল আলম, মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, মো. আবদুস সালাম আজাদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও মো. আব্দুল মজিদ।

