মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। বারবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বাঁধ ও ব্রিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে বালু তোলা চলতে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে পুরো এলাকা। প্রশাসন বলছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধে জিওব্যাগ বসানোর কাজ চলছে। ঠিক এর উল্টো পাশে, রহিমপুর ইউনিয়নের মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানের স্টিল ব্রিজের কাছাকাছি এলাকায় ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কার্যক্রম বেআইনিভাবে চলছে। এতে বাঁধ ও ব্রিজ ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়ছে। বিষয়টি জানিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। ফলে ধর্মপুর ও রামচন্দ্রপুর এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ, দুটি ব্রিজ এবং আশপাশের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মৃর্ত্তিঙ্গা স্টিল ব্রিজের সন্নিকটে নদীর বাঁধে জিওব্যাগ স্থাপনের কাজ চললেও একই স্থানে নদীর মাঝখান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে পাশেই ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই মাস ধরে একজন ইজারাদার ব্রিজের কাছ থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন করছে। এতে জিওব্যাগ স্থাপন কার্যক্রমও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় নদীভাঙন ও অবকাঠামো ক্ষতির আশঙ্কায় গত নভেম্বর মাসে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে গণদরখাস্ত দেন।
এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া ও আব্দুল খালিক বলেন, ধর্মপুর ও রামচন্দ্রপুর এলাকায় মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ধলাই নদীর ওপর দুটি স্টিল ব্রিজ রয়েছে। কয়েক বছর আগে মৃর্ত্তিঙ্গা ব্রিজের উত্তর পাশে প্রায় ২০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় বড় ক্ষতি হয়। এখন বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও একই সঙ্গে ব্রিজের পাশে বালু তোলায় পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অমান্য করে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। তারা জানান, বালু মহাল ঘোষিত নয় এমন স্থান থেকেও বালু তোলা হচ্ছে। এতে জনজীবন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে। তবে অভিযুক্ত ইজারাদার খোরশেদ আলম দাবি করেন, তিনি বৈধ ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন এবং ব্রিজ রক্ষা করেই কাজ করছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ব্রিজের পাশ থেকে কোনোভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোসা: শাহীনা আক্তার বলেন, বিষয়টি তিনি দেখছেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, ব্রিজের কাছ থেকে কোনো অবস্থাতেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

