বাংলাদেশ মোটরসাইকেল উৎপাদনে আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদক দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। সাত বছর আগে দেশের মোটরসাইকেল চাহিদার ৯৫ শতাংশই আমদানি করতে হতো কিন্তু বর্তমানে সরকারের নীতিগত সহায়তার ফলে ৯৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অথবা সংযোজনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এখনকার চিত্র উল্টে গেছে। পূর্বের আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর মোটরসাইকেল উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে, যা শুধু ডলারের সাশ্রয় নয় বরং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোটরসাইকেল সংযোজন ও উৎপাদনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
মোটরসাইকেল বিক্রির বিষয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশে মোটরসাইকেলের বাজার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ২০২৩ সালে দেশের মোটরসাইকেল বিক্রি পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে, যা ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬১ হাজার ৮০৫টিতে। মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারটি কিছুটা সংকুচিত হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
এ শিল্পের উন্নয়নে ২০১৬-১৭ সালে সরকার প্রণীত নীতিমালার ফলে মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা এই খাতের সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশে তিনটি মোটরসাইকেল কারখানা বন্ধ থাকলেও জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডা, সুজুকি, ইয়ামাহা এবং ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, টিভিএস ও হিরোর কারখানা পুরোদমে কাজ করছে।
টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় জানিয়েছেন, দেশীয় উৎপাদন ও সংযোজনের ফলে মোটরসাইকেলের দাম কমেছে তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার ফলে গত দুই বছরে মোটরসাইকেলের দাম বাড়ছে। মোটরবাইকের গড় দাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরে দেখা গেলে বিক্রির মোট পরিমাণ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে, যা যাত্রীবাহী গাড়ির বাজারের আকারের প্রায় সমান।
দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু হয়েছিল চলতি সহস্রাব্দের শুরুতে, যখন ওয়ালটন প্রথম মোটরসাইকেল তৈরি করে। রানার অটোমোবাইলস দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই খাতে প্রবেশ করে। এই শিল্পের উন্নয়ন ও বৈচিত্র্য আনতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান।
তিনি জানান, বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কারণ এই খাতটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। উৎপাদকরা প্রতিনিয়ত ফিচার আপডেট করছেন, ফলে ভবিষ্যতে কম দামের বাইকের বাজার ছোট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে মোটরসাইকেল বাজারে ক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে। তারা দামি মোটরসাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন এবং ভারতের বাজাজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপট বজায় রয়েছে।
অবশ্য, স্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ও যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের সংকট রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান এলসি জটিলতার কারণে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে উৎপাদন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। মোটরসাইকেল শিল্পের সম্প্রসারণে সহায়ক শিল্প ও প্রযুক্তি খাতের উন্নতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্প অদূর ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে, যদি সরকারের নীতিমালা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগের সমর্থন অব্যাহত থাকে।