২০ অক্টোবর রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ (সিআই) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে জনপ্রতি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬১ ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৪৮৫ টাকা। আজ জলবায়ু অর্থায়নের নামে বাংলাদেশ ও অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো ব্যাপক ঋণের বোঝা বহন করছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক তহবিল কীভাবে আসছে তা স্পষ্টভাবে নিরূপণ করতে হবে। অনুদানের পরিবর্তে যদি ঋণ হিসেবে ফান্ড আসে, তা হলে দেশকে শুধু জলবায়ু সংকটই নয় বরং অর্থনৈতিক সংকটও মোকাবিলা করতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। শুধুমাত্র তহবিল দেওয়া যথেষ্ট নয়, আমাদের দেখতে হবে যে এই অর্থ সবচেয়ে দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, কর্পোরেট এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির দিক থেকে যে ফান্ডিং আসে, তা প্রকৃত অর্থে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তরুণদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম এখন জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তাদের এমনভাবে ক্ষমতায়িত করতে হবে যাতে তারা কর্পোরেট স্বার্থে আটকে না পড়ে এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানে নেতৃত্ব দিতে পারে।”
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু খাতে ১৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু ঋণের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু খাতে ১৪৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ জমা হলেও বাংলাদেশকে এই ঋণ পরিস্থিতি ক্রমাগত চাপের মুখে ফেলছে।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সমস্যা, যা কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব যেমন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ এবং গাইবান্ধার কৃষকের ওপর পড়ছে, তেমনি ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও রাজস্থানের কৃষকদের জীবনেও পড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ৪৮০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে অভিযোজন খাতের অর্থায়ন ১০০ শতাংশ অনুদান-ভিত্তিক হতে হবে। জলবায়ু ঋণ মওকুফসহ উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।”
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে উঠে আসে যে, জলবায়ু খাতে যে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে তা শুধু সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং দরকার ন্যায্য এবং অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবস্থা, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করে। দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করতে ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে অনুদান ভিত্তিক ফান্ডের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
এ প্রতিবেদন পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয় যে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে ঋণ নয় বরং ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন মডেল প্রয়োজন।