চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির বেত দিয়ে ফার্নিচার তৈরিতে নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ প্রসারিত হচ্ছে।
এখানকার বেকার যুবকরা নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বেতের ফার্নিচার তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন।
বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে বেতের সহজ প্রাপ্যতা এর বহুমুখী ব্যবহার সেখানকার স্থানীয় জনগণের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেত চাষের আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেতের ফার্নিচার একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে বিকশিত হতে পারে।
যা ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ এনে দেবে।
খাগড়াছড়ির নয় উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায়, যেমন বাঘাইছড়ি, বাঘাইহাট, সিজকমুখ ও সাজেক, প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিকভাবে বেত জন্মে।
সম্প্রতি গোলা বেত, বুদুম বেত এবং মরিচা বেতের চাষাবাদ বাড়ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
পতিত পাহাড়ে বেতের চাষ করে অনেকেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
বেতের উৎপাদন এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে ওঠে। স্থানীয় কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদী বনায়নের পরিবর্তে বেতের বাগান করার প্রতি ঝুঁকছেন।
এর সহজ প্রাপ্যতার কারণে অনেকেই এখন বেতের ফার্নিচার তৈরির ব্যবসায় প্রবেশ করছেন।
যদিও উদ্যোক্তারা জানান, বেতের ফার্নিচার তৈরিতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পুঁজির অভাব ও বাইরের বাজারের সুযোগ না থাকায় স্থানীয় চাহিদার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
যদি বাইরে বেতের ফার্নিচারের বাজার সৃষ্টি হয়, তবে এখানকার বিভিন্ন আকর্ষণীয় বেতের সামগ্রী যেমন-
সোফা সেট, বুক শেলফ, ড্রেসিং টেবিল, রকি চেয়ার, ইজি চেয়ার, খোলা চেয়ার, কোর্ট হেঙ্গার, ফ্রুট হেঙ্গার, দোলনা, কর্নার ও ট্রে—দেশের অন্যান্য জেলাসহ বিদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
খাগড়াছড়িতে বেত ফার্নিচার শিল্পী লাইপ্রুচাই মারমা জানান, তিনি চার বছর ধরে বেতের বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি করছেন, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু করেছেন।
লাইপ্রুচাই বলেন, যদি সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তবে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাজের প্রতি আরও উৎসাহ বাড়বে।
তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় বাজারে বেতের তৈরি ফার্নিচারের কদর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেকেই সৌখিনতার কারণে বেতের ফার্নিচার নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন।
তিনি আরো জানান, বেতের ফার্নিচার কখনো পুরানো হয় না এবং এর কদর সারা বছর ধরে অটুট থাকে।
পরিবেশ রক্ষায় গাছ ও বাঁশের পরিবর্তে বেতকে কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগিয়ে বেতের ফার্নিচারকে শিল্পে রূপান্তর করা সম্ভব।
স্থানীয়ভাবে বেতের তৈরি ফার্নিচারের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগে একশো বেতের দাম ছিল ১,২০০ টাকা, যা বর্তমানে ২,৪০০ থেকে ২,৫০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এই কারণে বহু মানুষ বেতের ফার্নিচার নিজেদের প্রয়োজনেই বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান মন্তব্য করেন, এখানে কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতা অনেক বেকার যুবককে বেতের ফার্নিচার তৈরি করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগানোর সুযোগ দিয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, যদি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়।
তবে বেতের তৈরি ফার্নিচারকে এই অঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
এটি হতে পারে একটি লাভজনক শিল্প। এছাড়া, বেতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার উৎপাদিত বেত প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চট্টগ্রামের এই উদ্যোগগুলো যদি সঠিকভাবে পরিচালিত ও সমর্থিত হয়, তবে বেতের ফার্নিচার শিল্প শুধুমাত্র স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না।
বরং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।