আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আবারও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের চিত্র কিছুটা মলিন হয়ে উঠেছে। শুক্রবার প্রকাশিত ‘রিজিওনাল ইকোনোমিক আউটলুক: এশিয়া ও প্যাসিফিক’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এর প্রভাব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষত তৈরি করছে। ফলে দেশের প্রবৃদ্ধির গতি ক্রমশ শ্লথ হয়ে আসছে। যেখানে এপ্রিলে আইএমএফ ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ হিসেবে অনুমান করেছিল। সেখানে অক্টোবরে এসে এই পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পূর্বাভাসেও। এপ্রিলে আইএমএফ ধারণা করেছিল, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। কিন্তু অক্টোবরে সেই হিসাব প্রায় দুই শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনায় বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হচ্ছে, যা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে প্রত্যাশার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের এই নাজুক পরিস্থিতির বিপরীতে প্রতিবেশী ভারত তাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে, যা আঞ্চলিকভাবে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অর্থনীতির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চীনের প্রবৃদ্ধি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নেপাল এবং থাইল্যান্ডেও সামান্য পরিবর্তন হলেও মোটের ওপর তাদের প্রবৃদ্ধির হার স্থিতিশীল রয়েছে।
এই আর্থিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের তথ্যমতে, দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ইতোমধ্যে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে অবস্থান করছে। যা বছরের শেষে ১০ শতাংশেও পৌঁছাতে পারে। অন্যদিকে আঞ্চলিক গড় মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কমে ২ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির বিষয়টি আরও গুরুতরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনেও জানা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা আগের প্রান্তিকগুলোর তুলনায় বেশ কম।
আইএমএফের এই পূর্বাভাস দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় নীতি-নির্ধারকদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে তার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর আরও গভীর হয়ে পড়বে।