৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর জানান, দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি কমিয়ে পণ্যের দাম সহনীয় করতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, যেখানে মূলত রমজান মাসের আগে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ধরে রাখা এবং নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে নিয়মিত মনিটরিং চালানো হচ্ছে, তবে ওভার মনিটরিং করলে সংকট তৈরি হতে পারে, তাই বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর বলেন, “আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চালের মূল্য তুলনামূলক স্থিতিশীল। গত বছরের তুলনায় চালের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে এবং চালের উপর শূন্য ডিউটি প্রযোজ্য হলেও বর্তমানে আমদানির প্রয়োজন নেই। কারণ দেশের বাজারে সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে এবং ভারত থেকে চাল আমদানি করতে গেলে খরচ বেশি পড়ে। তবে কৃষকদের কথা বিবেচনা করে চালের দাম অত্যন্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এ বৃদ্ধির পেছনে দেশব্যাপী সাম্প্রতিক বন্যা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব ছিল। তিনি মনে করেন, এই বৃদ্ধিটা সাময়িক এবং জুলাই মাসের পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার ফলে কয়েক মাসের জন্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ মাত্রায় থাকতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় এবং জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় দেশের আমদানি খরচ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, “আমাদের বাজারভিত্তিক নীতিতে আমরা পলিসি রেট বৃদ্ধি করেছি, যদিও এ কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়নি। ব্যাংকগুলোর জন্য ট্রেজারি বিলের খরচ কমানোর ফলে কিছুটা লাভ কম হয়েছে কিন্তু এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর প্রতিফলন আগামীতে বাজারে দেখা যাবে।”
তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে রেশনিং বৃদ্ধি করা হয়েছে; ৫ কেজি চালের পরিবর্তে ১০ কেজি চাল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ওএমএস কার্যক্রমও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হবে, তবে এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। অযথা অভিযান পরিচালনা করে বাজারে সংকট তৈরি করা যাবে না বরং চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম সহনীয় রাখতে হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে কোনও সংকট নেই উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “এখন যে কেউ সহজেই এলসি খুলতে পারবেন। ডলার প্রাপ্তি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তবে বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকলেও ডলারের সরবরাহ সঠিকভাবে রয়েছে। এ পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক হবে।”
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রাইস লেভেল স্থিতিশীল রাখা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “মূল্যস্ফীতি কমিয়ে প্রাইস লেভেল সহনশীল পর্যায়ে আনতে মানুষের আয় বাড়ানোর প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে।”