“সংকট”- একটি শব্দ। কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে পরিবর্তনের অসীম সম্ভাবনা। বর্তমান সময়ে পৃথিবী যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে- তার মধ্যে করোনা-ভাইরাস মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা উল্লেখযোগ্য। এসব সংকট শুধু আমাদের জীবনে বাধা সৃষ্টি করছে না বরং নতুন দিগন্ত উদ্ভাবনের ভূমিকা রাখছে। মহামারি করোনা ভাইরাস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মানব সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ঠিক এই সংকটগুলির মাঝে আমরা উদ্ভাবনের নতুন একটি দিগন্ত খুঁজে পেয়েছি। সংকট কখনো কখনো আমাদের সৃষ্টিশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতার সন্ধান করে আমাদের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।
প্রথমতঃ করোনার সময় আমরা দেখেছি কীভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। বাড়িতে বসে শিক্ষা নেওয়া, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করা এবং ডিজিটাল ব্যবসায়িক মডেলগুলোর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখা- এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতিকে নতুন সম্ভাবনার খাত হিসেবে রূপান্তরিত করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ- ফুড ডেলিভারি এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগগুলো আমাদের সমাজে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং মানুষকে নতুন করে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমরা নতুন উদ্ভাবনের দিগন্তে প্রবেশ করেছি। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবাদি জমির সংকট মোকাবেলায় কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করেছে। এর ফলে তারা শুধু তাদের খাদ্য উৎপাদনই বাড়াচ্ছে না বরং পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক উদ্যোগগুলোও এই সংকটকালীন সময়ে অনেক উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করেছে। যুব সমাজ এখন নতুন সৃজনশীল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। যা সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলার যুব সমাজ বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে সামাজিক দায়িত্বশীলতার চেতনাকে জাগ্রত করেছে। তারা করোনার সময়ে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ ও তৈরি করেছে।
সরকারও উদ্ভাবনের এই দিগন্তে এগিয়ে এসেছে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রযুক্তিগত ভিত্তি শক্তিশালী করতে কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন অংশে ইন্টারনেট সুবিধা বৃদ্ধির ফলে গ্রামের মানুষও ডিজিটাল সুযোগের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন।
তবে এই উদ্ভাবনগুলোকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সংহতি এবং সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে। সংকটের সময়ে একত্রে কাজ করা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। ব্যক্তি, সমাজ এবং সরকার- সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের সামনে আসতে পারে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত।
সংকটের এ অনিশ্চিত সময়ে উদ্ভাবনের শক্তি আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। আমরা যখন সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করতে সংগ্রাম করছি, তখনই দেখা যাচ্ছে সৃজনশীলতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা যে নতুন পথ তৈরি করতে পারি- তা আমাদেরকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। উদ্ভাবন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেমন নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে, তেমনিভাবে তরুণ সমাজও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।
এই পরিবর্তনের মূল শক্তি হলো আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প। সংকটকে শুধু বাধা হিসেবে নয় বরং একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আসুন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একত্রে এই সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করি এবং আমাদের দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সন্ধানে এগিয়ে যাই। ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্য উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সংকটকে প্রতিহত করার এই যাত্রায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।