ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম (Eastern Economic Forum-EEF) একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, যা প্রতি বছর রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্ট এ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল সফটওয়্যার শিল্প, পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ(EEF-Equity and Enterpreneurship Fund)। এই ফান্ডটি উদ্যোক্তাদের সম-মূলধন সহায়তার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম ২০২৪ যা রসকনগ্রেস ফাউন্ডেশন দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। ভ্লাদিভোস্ট এ ৩ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফার ইস্টার্ন ফেডারাল ইউনিভার্সিটির (FEFU-Far Eastern Federal University) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে রাশিয়া ও বিদেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির CEO, সরকারী সংস্থার প্রতিনিধি, শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের সমাগম ঘটে। এই বছরের প্রধান থিম ছিল- ফার ইস্ট ২০৩০ শক্তিগুলোকে একত্রিত করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করা।
গত নয় বছরে, ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম জাতীয় উন্নয়নের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ১২০টির বেশি সেশন ও রাউন্ড টেবিল আয়োজন করা হয়, যেখানে ৭০০ এর বেশি বক্তা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের মঞ্চে মোট ৫.৫ ট্রিলিয়ন রুবল মূল্যের ৩০০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে ই ইএফ তার প্রধান লক্ষ্যগুলির পাশাপাশি একটি নতুন, সূক্ষ্ম এবং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েও কাজ করছে।
ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম একটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম যা রাশিয়ার ফার ইস্ট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফোরামটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, ব্যবসা এবং নীতিগত আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। ইইএফ মূলত সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো: ইইএফ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে সহযোগিতার সম্ভাবনাগুলো ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এখানে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রপ্রধানরা মিলিত হয়ে নতুন উদ্যোগ, প্রকল্প এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। ইইএফ ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিক খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এই ফোরামটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, তাই নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা এবং সহযোগিতার জন্য ইইএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
ইইএফ মানবসম্পদের দক্ষতা ও শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটি দেশগুলোর মধ্যে মানবসম্পদের আদান-প্রদান ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানান প্রকল্প ও কর্মসূচি গঠনের সুযোগ তৈরি করে।
ফোরামটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করতে সহায়ক। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বাজারগুলোর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করে।
এভাবেই ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম নয় বরং এটি একটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উদ্ভাবন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে । ইইএফ এর মাধ্যমে দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এশিয়া প্যাসিফিকের প্রভাব: বর্তমান সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলটি বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিশীল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চীন, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো এই অঞ্চলের উন্নয়নে নিবিড়ভাবে জড়িত। ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের মাধ্যমে রাশিয়া এই অঞ্চলটিতে নিজেদের কৌশলগত অবস্থান আরও মজবুত করতে তৎপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণে বেশ কিছু সমঝোতা হয়েছে, যা এ অঞ্চলে শক্তি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আঞ্চলিক উন্নয়নে ভূমিকা: ইইএফ আঞ্চলিক উন্নয়ন, অবকাঠামো গঠন এবং মানবসম্পদ বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন দেশ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রযুক্তি বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের সমন্বিত উদ্যোগ নিচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং একটি উন্নততর ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: ইইএফ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তবে এর পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ঘাটতি এবং জাতীয় স্বার্থের সংঘাত এই অঞ্চলের সহযোগিতার পথকে জটিল করে তুলেছে। তবুও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করার সম্ভাবনা জোরালোভাবে বিদ্যমান।
ভবিষ্যতে ইইএফ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা উন্মোচন করবে এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য এক সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সংহতির ভিত্তি গড়ে তুলতে ইইএফ যে ভূমিকা পালন করছে, তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক ইতিবাচক উদাহরণ।
ইইএফ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সংহতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। এ অঞ্চলটির অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তোলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। চীন, ভারত, জাপান এবং রাশিয়ার মতো দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইইএফ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও সুদৃঢ় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা এশিয়া প্যাসিফিককে একটি অগ্রসর এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
ইইএফ এর নেতৃত্বে প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আঞ্চলিক অর্থনীতিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে। যদিও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে তবুও ইইএফ এর মাধ্যমে এই দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাধান খোঁজার পথ তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম ভবিষ্যতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কেবল একটি অর্থনৈতিক মঞ্চই নয় বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক সংহতির প্রতীক হতে পারে। এই ফোরামের মাধ্যমে এ-অঞ্চলের দেশগুলো একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।