ঢাকায় সফররত আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতে ভর্তুকি কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার। প্রতিনিধি দলটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হলে চলমান মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে জনদুর্ভোগ তৈরি হবে বলে মনে করছে সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়। এ সময় প্রতিনিধি দলটি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কারণ, বিদ্যুতে ভর্তুকির জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফের প্রস্তাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয়বহুল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
এ ছাড়া আগামী বছর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন শুরু হবে। এগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী। ফলে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক কমে আসবে। এ সময় আইএমএফ প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ বিভাগকে এ-সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তাদের দেওয়ার প্রস্তাব করে।
বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আইএমএফ বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল ভর্তুকি হ্রাস করার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো। তবে অর্ন্তবর্তী সরকার ভর্তুকি দাম না বাড়িয়ে ব্যয় সাশ্রয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
আগামী বছর মার্চের শুরুতে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় দেওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত সংস্কার তথা ভর্তুকি কমানোর তাগিদ দিচ্ছে সংস্থাটি। প্রতিবার ঋণের কিস্তি ছাড়ের আগে তারা বাংলাদেশ সফর করে। এরই ধারাবাহিকতায় আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তাদের সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে।