সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ডাল, চিনি, সার ও ডিজেল আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ভিয়েতনাম সাউদার্ন ফুড করপোরেশন থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি টন চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭৪ দশমিক ২৫ ডলার। এ চাল আমদানির উদ্দেশ্য হলো দেশের খাদ্য মজুত বৃদ্ধি এবং সরকারি বিতরণ কার্যক্রম সচল রাখা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আগেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার ভিয়েতনাম থেকে চাল আনা হবে। সরকার বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেসরকারি খাতকেও চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ আমদানিতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ ডলার।
২০১৬ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ডিজেল আমদানি চলছে। এর আগে রেলপথে ডিজেল আমদানি হলেও ২০২৩ সালের মার্চে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি শুরু হয়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ১০ হাজার টন চিনি এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে প্রতি কেজি ১১৫ টাকা ৪২ পয়সা দরে ১০ হাজার টন চিনি কেনা হবে। যার মোট ব্যয় ১১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে প্রতি কেজি ৯৮ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে মসুর ডালের ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ টন ক্রয়ের জন্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে। এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৪০ ডলার।
বৈঠকে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য ট্রাক সেল কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাজার পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। রমজান মাস সামনে রেখে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।