বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কারণ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাংলাদেশে ঋণ ছাড়ের পরিমাণ পরিশোধের তুলনায় বেশি ছিল। এ সময়ে মোট ৩৯৪ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ এসেছে, আর পরিশোধ করতে হয়েছে ২৪২ কোটি ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থবছরের শুরুর দিকে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড় কম ছিল, কিন্তু ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ঋণ ছাড়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মোট চিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সাত মাসে মোট দেড় শ কোটি ডলার ঋণ ছাড় হয়েছে, যা ঋণ পরিশোধের তুলনায় বেশি। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ পরিশোধের চাপ আগের তুলনায় কমলেও এটি এখনও দেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
গত সাত মাসে বিদেশি ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে, যার পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ৮৮ কোটি ডলার এবং জাপান ৬৯ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশকে ১৮৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল, যেখানে চলতি অর্থবছরে এটি বেড়ে ২৪২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আসল পরিশোধ হয়েছে ১৫৪ কোটি ডলার, আর সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৮ কোটি ডলার।
বিদেশি ঋণ ছাড়ের তুলনায় নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা মোট ২৩৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম (৭১৭ কোটি ডলার)। এতে ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ এমন এক সময়ে বাড়ছে, যখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। অতিরিক্ত ঋণ পরিশোধের কারণে রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সুদ পরিশোধের বোঝা কমানোর দিকেও নজর দিতে হবে।