সরকার বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি লে-অফ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঋণ হিসেবে এই অর্থ বেক্সিমকো গ্রুপকে দেওয়া হবে, যা পরে পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিটিকে।
আগামী ৯ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে শ্রমিক ও কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ শুরু হবে এবং এটি চলবে রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই অর্থের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা দেবে, আর বাকি ২০০ কোটি টাকা আসবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানান, আজ শুক্রবার থেকে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লে-অফের আওতায় ছিল। এরপরও কাজের সংস্থান না হওয়ায় কোম্পানিটি চূড়ান্তভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও বেক্সিমকোতে নিযুক্ত রিসিভারের প্রতিনিধি থাকবেন।
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ২০০৮-২০২৪ সময়কালে জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন জানান, অনিয়মের ভিত্তিতে এসব ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরো বলেন, “ঋণ অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।”
সরকার বদলের পর বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত ১৩ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
প্রথম দিকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য বেক্সিমকো গ্রুপের কিছু শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা থাকলেও জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা কোনো শ্রমিকের বিরুদ্ধে নই। কোনো শ্রমিকের চাকরি হারানো আমরা চাই না। কারণ, তাঁদেরও পরিবার আছে। বেক্সিমকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন এমন কিছু না করেন, যাতে সরকারকে কঠোর হতে হয়।”
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো, সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় উদ্যোগী হলেও অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।