গ্রীষ্মকালে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা শীতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা যেখানে ৯ হাজার মেগাওয়াট থাকে গ্রীষ্মে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এই অতিরিক্ত চাহিদা সামাল দিতে সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য একাধিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে ১৫ শতাংশ সাশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী বাল্ব, ফ্যান ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় চালানো। সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করা। শিল্প খাতে বয়লারের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ফার্নেস তেলের ব্যবহার বাড়ানো। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রচার চালানো।
বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “১ ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উপযোগিতা ২.৫ থেকে ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমতুল্য।”
শিল্প ও কৃষি খাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হল- পিক ও অফ-পিক মিটার ব্যবহার নিশ্চিত করা। স্টিল ও রি-রোলিং মিলগুলোতে ফার্নেস তেলের দক্ষতা বাড়ানো। কো-জেনারেশন ব্যবহারে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করা। সেচ কার্যক্রম রাত ১১টা থেকে ভোর ৭টার মধ্যে পরিচালনার পরামর্শ। সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত গ্যাস ও কয়লার সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১২,৪১৩ মেগাওয়াট হলেও গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদন সীমিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও ফার্নেস অয়েলের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, “বিদ্যুৎ সাশ্রয় পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। যদি সরকার সহজ শর্তে ঋণ দেয়, তাহলে সাশ্রয় কার্যক্রম আরও সফল হবে।”
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “গ্রীষ্মে শুধুমাত্র এসি ব্যবহারের কারণে ৫-৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। যদি এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির ওপরে রাখা হয়, তাহলে ২-৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।”
বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গ্রীষ্মের তীব্রতা বাড়লে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সাশ্রয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও আসন্ন গরমের মৌসুমে ১,৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে।
সরকারের নেওয়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন।