রমজান উপলক্ষে ছোলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মূল্যও বেড়েছে। ২০২৪ সালের রোজার আগে প্রতি কেজি ছোলার খুচরা মূল্য ছিল ১০০-১০৫ টাকা যা এবার বেড়ে ১১০-১২০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে ছোলার মূল্য বেশি রাখা হচ্ছে, ফলে সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের পার্থক্যের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে অনেকে মজুদ করে রাখছেন, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদা কমতে শুরু করলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের অবস্থাদেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ৬-৭ টাকা কমেছে। জানুয়ারিতে পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হওয়ায় পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তবে খুচরা পর্যায়ে এখনও দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন নতুন মজুদ বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে।
ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে ছোলার বুকিং দর টনপ্রতি ৬২০-৬৪০ ডলার। ছোলা আমদানিতে শুল্ক না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দাম বেশি থাকার কারণে বাজার স্থিতিশীল হতে সময় লাগছে। অনেক ব্যবসায়ী কম দামে আমদানি করা ছোলা এখনও আগের বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন। তবে পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ বাড়লে কেজিপ্রতি আরও ১০-১২ টাকা দাম কমতে পারে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, কাজির দেউড়ি, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ১০৫-১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী নতুন মৌসুমের ছোলা বলে ১২৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। সাধারণ ভোক্তারা রমজানের আগে ভালোমানের ছোলা সংগ্রহ করতে চাওয়ায় বাড়তি দামেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেকান্দর বলেন, ‘বিগত রমজানের পর ছোলার সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করে। একসময় পাইকারি দরে কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা হয়েছিল। এখন পাইকারিতে সর্বনিম্ন ৮৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’
ছোলা আমদানি ও বৈশ্বিক প্রভাববাংলাদেশে ছোলা আমদানির প্রধান উৎস আগে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মিয়ানমার, তাঞ্জানিয়া ও ভারত ছিল। তবে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হচ্ছে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে তাঞ্জানিয়ার উৎপাদিত ছোলা আমদানি করা হলেও সরবরাহ কিছুটা কম। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ছোলা পাইকারিতে ৯৫-১০৮ টাকা এবং ভারতীয় ছোলা ৮৭-৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি পর্যাপ্ত থাকায় বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমদানির পরিসংখ্যানকাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারিতে ৯৩ হাজার টনের বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও প্রায় ১৫ হাজার টন ছোলা এসেছে। এছাড়া ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারিতে আরও ৬২ হাজার টন মসুর ডাল এবং ১ লাখ ৮ হাজার টন মটর ডাল (অ্যাংকর) আমদানি হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ছোলার বিকল্প হিসেবে মটর ডাল ব্যবহার করে থাকেন।
দেশের বাজারে প্রায় এক লাখ টনের বেশি ছোলা মজুদ থাকায় ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডালজাতীয় পণ্যের মূল্য পরিস্থিতিগত এক সপ্তাহে সব ধরনের ডালের দাম কেজিপ্রতি ২-৫ টাকা কমেছে। মোটা মসুর ডাল ৯৫-৯৭ টাকা, ভারতীয় চিকন মসুর ১২৪-১২৫ টাকা, দেশীয় চিকন মসুর ১৩০-১৩২ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৫৫-৫৭ টাকা, খেসারি ডাল ১০৫-১০৭ টাকা, ভারতীয় মুগডাল ১০৬-১০৭ টাকা এবং দেশীয় মুগডাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও ছোলার উচ্চমূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ‘দেশে ছোলার পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও আমদানিকারকরা দাম কমাতে গড়িমসি করছেন। পাইকারিতে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হলেও খুচরা পর্যায়ে বেশি মুনাফার কারণে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি বাড়ালে রোজার আগে ছোলার দাম আরও কমতে পারে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট তৈরি বন্ধ করা জরুরি। সরকারের তদারকি বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সাধারণ ভোক্তারা উপকৃত হবেন।