প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং খাত প্রতিনিয়ত নতুন রেকর্ড গড়ছে। ক্যাশলেস লেনদেনের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে যার ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিস্তারও দ্রুততর হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং খাতে লেনদেন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বিগত সাত মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২৪ সালের জুনে লেনদেন ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা, জুলাইয়ে কিছুটা কমে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা হলেও আগস্ট থেকে এই খাত আবার চাঙা হতে শুরু করে। আগস্টে লেনদেন হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭ কোটি, অক্টোবরে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি, নভেম্বরে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৮ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকায় পৌঁছায়। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল ফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি কার্যত ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকেরা ঘরে বসেই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন, যা তাদের সময় ও শ্রম বাঁচাচ্ছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, সরকারি ভাতা গ্রহণ, এমনকি প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) গ্রহণের মতো নানা সুবিধা মোবাইল ব্যাংকিংকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ ১৩টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে।
এমএফএস ব্যবস্থার মাধ্যমে পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারকদের বেতনও এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। ফলে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩ হাজার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার, নভেম্বরে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার এবং অক্টোবরে ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক শাহরিয়ার হোসেন জানান, ক্যাশলেস লেনদেনের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিংসহ কার্ডের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেশি হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। তিনি জানান, জানুয়ারিতে ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে যা দেশের ইতিহাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই ব্যাপক প্রসার বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতির প্রতিফলন। নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ ধীরে ধীরে একটি ক্যাশলেস সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।