আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে যা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুযায়ী, চলমান ১৪টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এর মধ্যে চার হাজার ৫১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে এবং এক হাজার ১০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বৈদেশিক সহায়তা থেকে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১৫৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসেবে আসছে অর্থবছরে বরাদ্দ কমছে পাঁচ হাজার ৫৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এমনকি চলতি বছরের সংশোধিত এডিপিতেও (আরএডিপি) এই খাতে বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা যার তুলনায়ও বরাদ্দ কমছে ৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
১৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে এই বাজেট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন করে ২৭টি অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রস্তাবিত ২৪টি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একটি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের একটি এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে এই বরাদ্দ হ্রাসের বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং সরকারের স্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি দেওয়া বরাদ্দ পুরোপুরি খরচ না হওয়ায় নতুন করে বাড়ানো যায় না তেমন গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, বরাদ্দ না খরচ হওয়ার পেছনে মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে ব্যয়ের কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। বরাদ্দ বাড়িয়েও এটি করা সম্ভব এবং সমস্যা সমাধান করা গেলে বরাদ্দের কার্যকর ব্যবহারে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।
ড. জাহিদ আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অধীনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বিষয়ক কর্মসূচি রয়েছে যার মধ্যে দরিদ্র মা ও শিশুদের জন্য শর্তসাপেক্ষে নগদ সহায়তা অন্যতম। এসব কর্মসূচি শিশুদের বিকাশ এবং পরিবারের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এসব কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। তার মতে, স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়, চিকিৎসা ব্যয় কমে আসে এবং সামগ্রিকভাবে জনগণের স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন ঘটে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে চলমান ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কয়েকটির বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হচ্ছে। যেমন, মানিকগঞ্জে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পে চলতি আরএডিপিতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার কোটি টাকা যা আগামী অর্থবছরে কমিয়ে ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একইভাবে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জামালপুর নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পে বরাদ্দ ২০৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যা ও চিকিৎসা চাহিদার নিরিখে এমন হ্রাসকৃত বরাদ্দ ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বরাদ্দের অকার্যকর ব্যবহার যদি সমস্যা হয় তবে তা সমাধানে প্রশাসনিক ও কাঠামোগত উদ্যোগ প্রয়োজন বরাদ্দ কমানো নয়।