বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বহুমুখী বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (Preferential Trade Agreement – PTA) দ্রুতই স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি।
আজ রবিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। সেমিনারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। অংশ নেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকরা।
নেপালি রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি বলেন, “বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে প্রাণ, আকিজ ও বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি নেপালে কাজ করছে। আমরা চাই এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও প্রসারিত হোক।”
তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। বর্তমানে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ ৯ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বাংলাদেশ ও নেপাল উভয়ই আগামী বছর এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) তালিকা থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে। এতে করে কোটামুক্ত বাজারপ্রবেশ সুবিধা কমে আসবে, যা দুই দেশের জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
তাই এলডিসি-উত্তর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার বিকল্প নেই, বলে মত দেন তিনি।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নেপাল থেকে বড় পরিসরে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, ভারতের ট্রানজিট ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বজুড়ে এখন আবার শুল্ক দেওয়ালের প্রবণতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রপ্তানি বাড়াতে হবে এবং রপ্তানির ধরনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে।”
এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও গভীর করা দরকার। বাণিজ্য, বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো খাতে যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়েই দুই দেশ নিজেদের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারবে। PTA স্বাক্ষর সেই যাত্রারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হয়ে উঠবে।