যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সেমিকন্ডাক্টরের ওপর প্রায় ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে যেসব কোম্পানি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করছে বা ভবিষ্যতে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের জন্য থাকবে ছাড়। বিষয়টি উঠে এসেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, দেশের ভেতর চিপ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ফেরানোর লক্ষ্যেই শুল্ক আরোপের এ পরিকল্পনা।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিনিয়োগ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেশীয় উৎপাদন পরিকল্পনারই প্রতিফলন। ট্রাম্পও জানিয়েছেন, যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ছে বা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।
তবে সাবধানতা প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, “কেউ যেন কারখানা গড়ার কথা বলে পরে প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটে না। যদি তা করে, তাহলে আগের সব শুল্ক হিসাব করে যোগ করা হবে এবং তা পরিশোধ করতেই হবে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের বক্তব্য আনুষ্ঠানিক কোনো শুল্ক ঘোষণা নয়—এটি কেবল একটি পরিকল্পনার ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রযুক্তিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট একটি কৌশল হতে পারে। আগামী আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এ নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।
তবে এই উদ্যোগ বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ বাণিজ্যদূত জানান, বিশ্বের অন্যতম বড় চিপ নির্মাতা স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্স এ শুল্কের আওতায় পড়বে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে থাকা একটি বাণিজ্য চুক্তির আওতায় দেশটি সেমিকন্ডাক্টর পণ্যে সবচেয়ে অনুকূল শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। তবে স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্স এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে ফিলিপাইনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প সংগঠনের সভাপতি ড্যান লাচিকা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এই পরিকল্পনা আমাদের দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।”
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বলেন, “শুল্ক আরোপের কারণে যদি মালয়েশিয়ার পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হ্রাস পায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় বাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে আমরা।”

