মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা কয়লার একটি চালানে মিলেছে পাথর, কাদা ও অন্যান্য অনাহুত উপাদান। বিদ্যুৎ বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে, এসব উপাদান বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গত ১৭ মার্চ এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড নামের জাহাজ ৬৩ হাজার ৩০০ টন কয়লা নিয়ে মাতারবাড়ী জেটিতে ভেড়ে। এটি ছিল ১১তম চালান। এক-তৃতীয়াংশ খালাসের পর প্রায় ১৫০টি বড় পাথর ধরা পড়ে। এর মধ্যে কিছু পাথরের ওজন ছিল ৩০ কেজি পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, পুরো চালান ছিল পানিতে ভেজা এবং কাদা ও লালচে পদার্থ মিশ্রিত, যা কয়লার ওজনও বাড়িয়ে দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গত বুধবার বলেন, “হ্যাঁ, আমি বিষয়টি জানি। সরবরাহকারী পাথর মেশানো কয়লা এনেছে, কিছু পাথর ছিল ৩০ কেজি ওজনের।”
প্রথমে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পুরো চালান ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পরে শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করে। শর্ত ছিল— পাথর ও অন্যান্য উপাদান সরবরাহকারীর খরচে আলাদা করা, অতিরিক্ত পানির হিসাব কষে প্রকৃত কয়লার পরিমাণ নির্ধারণ এবং বন্দরে আটকে থাকা জাহাজের ফি সরবরাহকারীকেই দেওয়া।
সরবরাহকারী হচ্ছে বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপ ও ভারতের আদিত্য বিরলা গ্রুপের পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেডের যৌথ কনসোর্টিয়াম। তারা ঘটনাটি স্বীকার করে জানিয়েছে, কয়লায় বড় পাথর, কাদা ও পানির উপস্থিতি ছিল। তবে কারণ হিসেবে দায়ী করেছে “ভারী বৃষ্টি”কে। তবে বড় আকারের পাথর ও অনাহুত উপাদান নিয়ে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনি। শুধু বলেছে, ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে।
চালান প্রত্যাখ্যান না করতে মেঘনা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে অনুরোধ জানায়। তারা প্রতিশ্রুতি দেয়, ম্যানুয়ালি কয়লা থেকে পাথর ও কাদা আলাদা করা হবে। কিন্তু কোম্পানি জানায়, ইতোমধ্যে ২২ হাজার ৭৭৪ টন কয়লা আনলোড করা হয়েছে এবং সেখানেই প্রায় ১৫০টি পাথর পাওয়া গেছে। বাকি কয়লাতেও একই সমস্যা থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত ২৪ মার্চ যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সানাউল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে কয়লা খালাসের সময় তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে নমুনা পরীক্ষা ও জরিপ কমিটির মাধ্যমে যাচাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরবরাহ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চালান থেকে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “আমরা সরবরাহকারীকে পাথর ও অন্যান্য পদার্থ আলাদা করার নির্দেশ দিয়েছি। জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে ছিল এবং সরবরাহকারীকে ওভারস্টে ফি দিতে হয়েছে। এটা ছিল একটা টাফ পানিশমেন্ট।” তিনি জানান, ব্যবহারযোগ্য ও অযোগ্য কয়লা আলাদা করতে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর্থিক জরিমানার বিষয়টি এখনও বিবেচনায় আছে, কারণ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তাঁর টেবিলে পৌঁছায়নি।
মেঘনা গ্রুপ ও আদিত্য বিরলা গ্রুপ এক বছরের জন্য মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৫ লাখ টন কয়লা সরবরাহের চুক্তি পেয়েছে। এর অংশ হিসেবেই এই চালান আসে। ঘটনাটি সামনে আসে হাতে আসা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির একটি ফাঁস হওয়া চিঠির মাধ্যমে। এরপর কয়লা গ্রহণকারী কমিটি বাধ্য হয়ে আনলোডিং বন্ধ করে। কারণ অতিরিক্ত আঠালো কয়লার কারণে কনভেয়ার বেল্ট ও জেটির স্ক্রিন বারবার জট বেঁধে অচল হয়ে পড়ছিল।

