শরিয়াহ্ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর এক মাসে ২২–৩৫% কমেছে। মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের কারণে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূত পরিকল্পনা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক টানা দরপতনের মুখে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আতঙ্কের নাম।
মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ এবং আমানত সংকট সামলাতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একীভূত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু আশার বদলে এই ঘোষণা বাজারে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
বর্তমানে এই পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাজারে এটিই তাদের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। অনিশ্চয়তার কারণে শেয়ারের দর আরও নিচে নামছে এবং ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন।
কতটা কমেছে শেয়ারের দাম
গত এক মাসে এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে ২২ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। ২৮ জুলাই যেখানে প্রতি শেয়ার ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা, এখন সেটি ৫ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। পতন প্রায় ৩৫ শতাংশ।
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শেয়ারদর ৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ টাকায়। পতন এক-তৃতীয়াংশ।
- এক্সিম ব্যাংকও পিছিয়েছে সমান হারে। ৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৪ টাকা ৪০ পয়সায়। পতন ৩২ শতাংশের বেশি।
- গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক—দুটোর শেয়ারই ৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে ২ টাকা ৪০ পয়সা। পতন ২২ শতাংশের বেশি।
টাকার হিসাবে এই পতন ছোট মনে হলেও, যেহেতু এসব শেয়ারের দাম ২ থেকে ৩ টাকার মধ্যে, কয়েক পয়সার পতনই শতাংশের হিসাবে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কও সেখানেই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, “একীভূত হওয়ার পর কোন শেয়ারের অংশ কীভাবে রূপান্তরিত হবে, তা অনিশ্চিত। অনেকে মনে করছেন, যা পাওয়া যায় সেটাই এখন নিরাপদ। তাই লোকসান হলেও শেয়ার বিক্রি করছেন।”
বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, “এই ব্যাংকগুলোতে নতুন আমানত আসছে না। বরং আমানতকারীরা টাকা তুলতে চাইছেন। বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ব্যাংকগুলো হয়তো টিকবে না। তাই যত দামে হোক শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “প্রকৃতপক্ষে এসব ব্যাংকের দায় সম্পদের চেয়ে বেশি। তাই শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া স্বাভাবিক। বাস্তবে এদের শেয়ারের কোনো মূল্য থাকার কথা নয়। এগুলো ঋণাত্মক সম্পদে চলছে। একীভূত হওয়ার পর সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

