রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক অনন্য স্তম্ভ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে এটি রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণসঞ্চার, সর্বোপরি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এর অবদান অপরিসীম। সম্প্রতি রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, বিশেষত যখন অন্যান্য অনেক সূচকে মন্দা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি খাতের ওঠানামা, সব মিলিয়ে অর্থনীতির গতি বারবার টালমাটাল অবস্থায় পড়ছে। এর মধ্যেই আশার আলো হয়ে উঠেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের শ্রমবাজারের নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এটি এখন সবচেয়ে বড় ভরসা।
শুধু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস নয়, কোটি মানুষের জীবিকা, গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তিও হলো এই রেমিট্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড করেছে, যা অর্থনীতিকে নতুন করে আশাবাদী করেছে। তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি নির্ভরতার ঝুঁকি ও ভবিষ্যতের নানা চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান, যা মোকাবিলা করেই অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পথে এগিয়ে নিতে হবে।
রেমিট্যান্সের বর্তমান অবস্থা: ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রবাসীরা দেশে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের ২৭ বিলিয়নের তুলনায় প্রায় ২৬ দশমিক ৮% বেশি। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।
মাসভিত্তিক প্রবণতা অনুযায়ী, জুলাই ২০২৫-এ রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই হ্রাস মূলতঃ প্রবাসী শ্রমিকদের মৌসুমী চাকরি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবের কারণে ঘটেছে। আগস্টের প্রথম ২০ দিনে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ দশমিক ৪% বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২৭ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয়। এই সময়ে প্রাপ্ত মোট রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স ছিল ১৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২৪ আগস্ট গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক এই প্রবাহ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে, প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পরিসংখ্যান দেখায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুলাই মাসে সাময়িক হ্রাস থাকা সত্ত্বেও, আগস্টের প্রথম দিকে প্রবাহ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী রাখছে এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনছে। সাম্প্রতিক এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কেবল পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলা এবং সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
রেমিট্যান্স কীভাবে অর্থনীতির জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আজ যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার মধ্যে রেমিট্যান্স এক উজ্জ্বল আশার আলো হয়ে উঠেছে। প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করছে, যা আমদানি ব্যয় মেটানো এবং বৈদেশিক ঋণের চাপ সামলাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এই স্থিতিশীল প্রবাহ বিনিময় হারকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে এবং সামগ্রিক অর্থপ্রদানের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টসকে উন্নত করছে। শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স প্রত্যক্ষভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখছে। কোটি পরিবার এই আয়ের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে, সন্তানের শিক্ষা নিশ্চিত করছে এবং স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নত করছে।
এই আয়ের একটি বড় অংশ জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণে সহায়তা করছে, যা সরকারকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থ ব্যয় করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন। মার্চ ২০২৫ মাসেই এসেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও মজবুত করেছে। এই অর্থনৈতিক প্রবাহ শুধু পরিবারের খরচ মেটাচ্ছে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে গতি আনছে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সরাসরি অবদান রাখছে।
সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এটি কেবল বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণ করছে না, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অন্যতম ভরসা হিসেবে সামনে এগিয়ে আসছে। তবে এই ভরসাকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করতে হলে প্রবাসী আয়কে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহকে আরও বহুগুণ বাড়াতে হবে।
রেমিট্যান্সের প্রভাব ও গুরুত্ব: রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক, দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রাখে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রবাসীরা যেভাবে পরিবারগুলোর মৌলিক চাহিদা মেটাতে, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে এবং ছোট ব্যবসায় অর্থায়ন করতে তাদের আয় ব্যবহার করেন, তা সরাসরি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিফলিত হয়।
রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল আয় দেয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়তা করে। এটি শুধুমাত্র নগদ প্রবাহ নয়, বরং দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার একটি মূল চালিকা শক্তি। প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ যখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, কারণ এটি দেশের জন্য নতুন করে আশা ও স্বস্তি নিয়ে আসে।
দারিদ্র্য বিমোচনেও রেমিট্যান্সের অবদান অনস্বীকার্য। এটি পরিবারগুলোকে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম করে, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হয়। প্রবাসী আয় স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে। এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ ভোগ ও চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে আরও সক্রিয় করে।
পরিসংখ্যান দেখায়, বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের প্রায় ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ শতাংশ রেমিট্যান্স থেকে আসে, যা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং অর্থনীতিকে নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে। এটি কেবল পরিবারের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম নয়, বরং সমগ্র জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: যদিও রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভরসা, তবে এই ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সর্বপ্রথম, অর্থনীতি যদি অতিমাত্রায় রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তবে বৈশ্বিক শ্রম বাজার বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এছাড়াও এখনও অনেক রেমিট্যান্স হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে, যা পুরোপুরি সরকারি বা আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়নি।
অন্যদিকে দেশের শ্রম বাজারে দক্ষতার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রবাসী হিসেবে কর্মী পাঠানো বা বিদেশে কর্মসংস্থান অর্জন করতে গেলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা এখনও অনেকাংশে কম, যা দেশে রেমিট্যান্সের কার্যকর ব্যবহারকে সীমিত করে। তাছাড়া বৈদেশিক অর্থনীতির অস্থিরতা বা মন্দা হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ হঠাৎ কমতে পারে। এজন্য শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর না থেকে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, রপ্তানি খাত এবং বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে রেমিট্যান্সকে দেশের স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন, অনুষ্টানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী দিনে রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির জন্য আরও শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে।
রাজনৈতিক ও নীতি কাঠামোর ভূমিকা: রেমিট্যান্সের সঠিক ব্যবহার ও প্রবাহ বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কার্যকর নীতি কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুসংগঠিত নীতি কাঠামো রেমিট্যান্সকে বৈধ পথে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। সরকারি উদ্যোগ ও সমন্বিত নীতির মাধ্যমে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা, তাদের সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং প্রণোদনা ও সুবিধা প্রদান করা সম্ভব, যা প্রবাসীদের নিরাপদভাবে অর্থ উপার্জন ও পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা যায়। সরকার ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা এবং সামাজিক পরিবেশের সমর্থন এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে। হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থের ক্ষতি রোধ করা, রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করা এবং প্রবাসী আয়কে দেশে পুঁজি বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ব্যবহার করা, সবই একটি কার্যকর নীতি কাঠামোর অঙ্গ।
ফলতঃ শক্তিশালী নীতি কাঠামো ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে রেমিট্যান্স কেবল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায় না, বরং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখে, বৈদেশিক নির্ভরতা কমায় এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, যথাযথ নীতি ও প্রযুক্তি সমন্বয় রেমিট্যান্সকে দেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী এবং টেকসই ভিত্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে।
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক শক্তিশালী ভরসা ও আশার প্রতীক। এটি শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করছে না, পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। তবে রেমিট্যান্সের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রবাসী আয়কে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং দক্ষ শ্রমশক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা গেলে এটি দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

