সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো বলছে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো অর্থাৎ উন্নয়নশীল বিশ্ব ক্রমবর্ধমান ঋণ নির্ভরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং উন্নত দেশগুলোর মুদ্রার শক্তি ও অস্থিরতা। এর ফলে ডলারে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। উচ্চ সুদের হার ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এসব দেশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অভিঘাতের প্রতি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতার মাঝে দক্ষিণ বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণের জন্য নেওয়া বৈদেশিক ঋণ এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি ঋণদাতা ও বৈশ্বিক বন্ডহোল্ডারদের কাছে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে দেশগুলোকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু অভিযোজনের মতো অপরিহার্য খাত থেকে বরাদ্দ কমাতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এমন দেশে বসবাস করছে যেখানে ঋণ পরিষেবায় ব্যয় স্বাস্থ্য বা শিক্ষার চেয়েও বেশি। আফ্রিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সবখানেই ঋণের বেড়াজাল অর্থনীতিকে শ্বাসরোধ করে তুলছে। এই সংকট কেবল উন্নয়নকে থামিয়ে দিচ্ছে না, বরং দারিদ্র্য ও বৈষম্যকে তীব্রতর করে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকিতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার চিত্র: জাতীয় অর্থনৈতিক দৃশ্যপট আজ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রথমতঃ সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখনও অনেক বেশি এবং এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সংকুচিত করছে। উদাহরণ স্বরূপ- জুলাই ২০২৫-এ বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে, যা জুন মাসের ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশের তুলনায় কিছুটা বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, টানা কয়েক মাসের নিম্নমুখী ধারা ভেঙে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে আবারও মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলে জনগণের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে এবং সাধারণ জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা জুনে কমে এলেও জুলাইয়ে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে, যা অর্থনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে জিডিপি-বৃদ্ধির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)-এর এপ্রিল ২০২৫ সালের ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯% হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা আগের পূর্বাভাস ও অতীত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২০২৩-২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পূর্বাভাস ৫ দশমিক ১% ছিল এবং এপ্রিল ২০২৪-এ প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬% এবং এই ধারা থেকে দেখা যায় অর্থনীতি গত এক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ধীরগতিতে প্রবৃদ্ধি করছে।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ওই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন: ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, কর সংগ্রহ ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং জানুয়ারির জাতীয় বাজেট, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে কিছুটা বাঁধা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, অর্থনীতির নানা খাত বিশেষ করে বিনিয়োগ ও আর্থিক ধারাবাহিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অপরদিকে এই পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন মতামত বিদ্যমান। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এগুলো দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য সহায়ক হতে পারে, আবার অনেকে মনে করেন যে রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে মিলিত হলে এগুলো স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। গবেষণার প্রমাণও দেখায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরাসরি মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে, যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য। যথাযথ স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এছাড়া বৈশ্বিক মুদ্রা বাজার ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতি উভয়ের সামঞ্জস্যহীনতা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থান অস্থিরতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে কমছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মৌলিক চাহিদা বজায় রাখতে সমস্যা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি থেকে টেকসই উত্থানে অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যে যথাযথ সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে রাজনৈতিক স্থিতি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার স্বাভাবিক উন্নয়ন সম্ভবপর নয়।
এই পরিস্থিতি কেন ঘটছে? দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলো কেন ক্রমশঃ ঋণ নির্ভরতার ফাঁদে আটকে পড়ছে, তার পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক কারণ। প্রথমতঃ বৈশ্বিক মুদ্রার অস্থিরতা এই সংকটকে তীব্র করেছে। মার্কিন ডলারসহ শক্তিশালী মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন ঘটায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বৈদেশিক ঋণ নেওয়া ও তা পরিশোধ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত: উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হার বাড়িয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক ঋণের ওপর। এর ফলে ঋণের সুদ মেটাতে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি সংকট, সরবরাহব্যবস্থার অস্থিরতা ও খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য দক্ষিণ বিশ্বের অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালিয়ে যেতে বা বৈদেশিক ঘাটতি পূরণে এসব দেশ বাধ্য হচ্ছে আরও ঋণ নিতে। বিদেশি মুদ্রার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অভিঘাতের প্রতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো ঋণের অর্থ যথাযথ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে ভর্তুকি, প্রশাসনিক খরচ বা অপ্রাধান্য খাতে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় অর্ধেক দেশকে এখন তাদের বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে ঋণ পরিষেবায়; ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু অভিযোজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক মুদ্রানীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা দক্ষিণ বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ ঋণচক্র তৈরি করেছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এর প্রভাব কী হতে পারে? ঋণ নির্ভরতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ হতে পারে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে টেকসই উন্নয়নের পথে। ঋণ পরিশোধের জন্য বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়ে গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও জলবায়ু অভিযোজনের মতো জরুরি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর।
অর্থনৈতিকভাবে এই চাপ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে অনেক রাষ্ট্রকে। ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু দেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছে, যার ফলে ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে উচ্চ সুদের ঋণ, এসব মিলিয়ে অর্থনীতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর পরিণতিতে মুদ্রার দরপতন, কর্মসংস্থানের সংকট এবং বৈদেশিক রিজার্ভে টান পড়া এখন নিয়মিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা সামাজিক ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যখন জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটে, তখন বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বেড়ে যায়। এসব থেকে জন্ম নেয় অস্থিরতা ও ক্ষোভ, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে গড়াতে পারে। শ্রীলঙ্কা কিংবা জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোর সাম্প্রতিক ঋণ সংকট দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে আর্থিক বিপর্যয় সরাসরি সামাজিক অশান্তি তৈরি করতে পারে।
তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ঋণনির্ভরতার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা। এর জন্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় ঋণ আজকের দুঃস্বপ্ন হয়ে আগামী দিনের জন্য আরও বড় সংকট ডেকে আনবে।
কীভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব: দক্ষিণ বিশ্বের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন সাহসী ও টেকসই নীতি গ্রহণ। ক্রমবর্ধমান খরচ, নিম্ন ক্রয়ক্ষমতা এবং ঋণ নির্ভরতার চাপ মোকাবিলায় সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী ও সৎ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী সমাধান বা ঋণ নেওয়ার ওপর নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে না; বরং উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যকর করা প্রয়োজন।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমন্বয়। জনগণের আস্থা অর্জন এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে রাজনীতির সদিচ্ছা এবং বাস্তব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয়ের বৈষম্য হ্রাস এবং সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোর জীবনমান উন্নত হয়।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এক বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এছাড়া কোনও বিকল্প নেই। স্থিতিশীল রাজনীতি এবং দৃঢ় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সমন্বয়ে দেশগুলো ঋণচক্র ভেঙে উন্নয়নশীল পথে এগোতে পারবে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সংস্কার একসঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে, সেখানে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলো আজ এমন এক জটিল অর্থনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে ঋণ চক্র শুধু অর্থনীতিকে শ্বাসরোধ করছে না, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। বৈশ্বিক মুদ্রার অস্থিরতা, উচ্চ সুদের হার, অর্থনৈতিক মন্দা এবং উৎপাদনশীল খাতে সীমিত বিনিয়োগ এসব মিলিয়ে দেশগুলোকে ক্রমশঃ ঋণ নির্ভর হতে বাধ্য করছে। উগান্ডা, বোলিভিয়া ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে কীভাবে ঋণের বোঝা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক খাত থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। টেকসই ও সৎ নীতি গ্রহণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সমন্বয়, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ এবং বৈষম্য হ্রাস, এসবই দেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর ও স্থিতিশীল করার পথ খুলে দিতে পারে। দক্ষিণ বিশ্বের জন্য প্রয়োজন শুধু ঋণ কমানো নয়, বরং এমন অর্থনৈতিক সংস্কার যা দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্য হ্রাস, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। বিশ্বব্যাপী নীতি নির্ধারক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে, তবে মূল দায়িত্ব দেশগুলোকে নিজস্ব শক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা করা। সর্বোপরি ঋণ নির্ভরতার দারিদ্র্য ও সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সৎ নেতৃত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য। এই সমন্বয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ বিশ্ব কেবল ঋণচক্র ভাঙতে পারবে না, বরং টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারবে।

