দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আপাতত স্থিতিশীলতা ফিরেছে। খোলাবাজারে ডলার এখন ১২৫ টাকার নিচে, যেখানে এক বছর আগে দাম ছিল ১৩১ টাকার ওপরে। ব্যাংক রেটও নেমে এসেছে ১২২ টাকার ঘরে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত বাজার থেকে ডলার কিনছে। লক্ষ্য, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনে রিজার্ভ শক্তিশালী করা এবং বাজার স্থিতিশীল রাখা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও চাপের মধ্যে ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে অনাগ্রহ এবং এলসি মার্জিন কড়াকড়ির কারণে আমদানি ব্যয় কমেছে। ফলে ডলারের চাহিদা হ্রাস পেয়ে দাম স্বাভাবিক হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১.৭৫ থেকে ১২২.৭৯ টাকার মধ্যে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার স্থিতিশীল রাখা। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো পদক্ষেপ। কার্ব মার্কেটেও ডলারের দর এখন ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ১৩১ টাকা।
আমদানি ব্যয়ের হ্রাসও বাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ ৬১ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ছিল ৭১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮২ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বর্তমান রিজার্ভ ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর জনগণের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে। স্থিতিশীলতা বেড়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়বে, তখন আমদানি ব্যয় ও ডলারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
রিজার্ভের চিত্রেও গত এক বছরে ভালো পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২১.৮ বিলিয়ন ডলার, এখন বেড়ে ৩০ বিলিয়নের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ৪ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ৩১.৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে ২৬.৪১ বিলিয়ন ডলার। আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ যথাক্রমে ৩০.৩১ এবং ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা ডলার কিনছি। এতে রিজার্ভ বাড়ে, যা সংকটময় সময়ে কাজে লাগে এবং বিদেশি ব্যাংকের আস্থা বাড়ায়। অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

