বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে, যেখানে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই। ব্যাংক-গ্রাহকের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই হবে এ সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান আবেদন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে নীতি সহায়তা দেওয়ার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি। চাপ কমাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বের একটি অংশ ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ৩০০ কোটির বেশি ঋণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) শিগগিরই একটি নতুন সার্কুলার জারি করবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন বিষয়ক মাস্টার সার্কুলার সংশোধন করে এতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে।
একজন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা চাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে। এতে চাপ কমবে এবং ব্যবসায়ীদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। শিগগিরই নতুন সার্কুলার আসছে।” বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা কমিটির এক সদস্য জানান, “আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ আবেদন পেয়েছি কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৫০০টি প্রক্রিয়া করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিদিন চাপ বাড়ছে। এজন্যই ব্যাংকগুলোকে কিছু দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেই নন-ডিফল্টার। এমনকি কেউ কেউ পূর্বে ঋণ খেলাপি হয়ে হিসাব মুছে দেওয়ার পরও আবার সুবিধা চাইছেন। আবার নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক কিছু প্রার্থীরও প্রয়োজন সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) ক্লিয়ারেন্স, তাই তারাও নীতি সহায়তা চাইছেন।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের সুবিধা বাড়াতে ডাউন পেমেন্ট কমানো ও গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। তবে গ্রেস পিরিয়ডে ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করতে হবে যাতে ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে কিছুটা স্বস্তি পায়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে এসব বিষয় সমাধান করতে পারবে। এতে প্রক্রিয়া সহজ হবে।”
তবে তিনি সতর্ক করেন, “নীতি সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত খেলাপিদের জন্য। কিন্তু এখন নন-ডিফল্টাররাও এমন সুবিধা চাইছে। এমনকি যাদের অ্যাকাউন্ট আগে রাইট-অফ করা হয়েছে, তারাও আবেদন করছে। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা।”

