বাংলাদেশে মাছ চাষ গত কয়েক বছরে অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুকুর, হ্রদ এবং নদী ভরাট করে তৈরি আধুনিক একিউয়াকালচারের মাধ্যমে দেশের মৎস্য উৎপাদন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মৎস্যখাত শুধু দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে না, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তিও, যেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলাশয়ও ক্রমেই কমছে। যুগ যুগ ধরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করা জেলে পরিবারের সদস্যরা এখন কম মাছ পেয়ে বিপন্ন হচ্ছেন। তবুও গ্রামীণ বাংলাদেশে “মাছে ভাতে বাঙালি” প্রবাদটি আজও সত্য। ছোট পুকুর খনন, ঘরে ঘরে হ্যাচারি তৈরি এবং দীর্ঘ ঘণ্টার পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রামের মানুষরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন এক সমৃদ্ধ মাছ চাষ শিল্প। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে বাঙালির ভাতের থালা থেকে মাছ আজও হারায়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি: বাংলাদেশে মাছ চাষ গত কয়েক দশকে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট উৎপাদন ৫০ লাখ টনেরও বেশি হয়েছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশ এসেছে খামারভিত্তিক চাষ থেকে। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে দেশে মোট মাছ উৎপাদনের মাত্র ১৬ শতাংশ আসত খামার থেকে। তখন দেশের মোট মাছের চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পূরণ হতো নদী, হাওর আর প্লাবনভূমি থেকে আহরিত প্রাকৃতিক মাছের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রাকৃতিক উৎসের উৎপাদন প্রায় একই থাকলেও, চাহিদার মাত্র ২৮ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। বাকিটা আসে খামারভিত্তিক চাষ থেকে। দেশে প্রায় ৮ দশমিক ৭ লাখ হেক্টর পুকুর, খাল ও জলাভূমি খামারভিত্তিক মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
খামারভিত্তিক মাছ চাষ দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২ শতাংশে অবদান রাখছে। এটি প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ ২ কোটি মানুষের জীবিকার উৎস। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদনকারী দেশ। মাছ চাষের এই সাফল্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, পুষ্টিগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৬৭ দশমিক ৮ গ্রাম মাছ খাচ্ছেন, যা সরকারের লক্ষ্যমান ৬০ গ্রাম অতিক্রম করেছে। গত দশকে চাষ হওয়া পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো মাছ গ্রামীণ সাধারণ পরিবারগুলোর ভাতের থালায় ইলিশ, রুই, কাতলার মতো দামী দেশি মাছের স্থান দখল করেছে।
বাংলাদেশের পুকুর ও খালভিত্তিক মাছ চাষে গত তিন দশকে এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এই সময়ে দেশের মোট মাছ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৫ গুণ, যা বিশ্বে একটি অনন্য সাফল্যের নজির। এর ফলে বাজারে মাছের সহজ লভ্যতা বেড়েছে, দামও তুলনামূলকভাবে মানুষের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সহজ হয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বব্যাপীও মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে মাছ উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো এখন বৈশ্বিক মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মাছ চাষে সাফল্যের ঢেউ: বাংলাদেশে মাছ চাষ এখন এক নতুন সাফল্যের যুগে পৌঁছেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত পদ্ধতির ব্যবহার উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মোট মাছ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ টনে, যার মধ্যে ৩২ লাখ টন এসেছে খামারভিত্তিক চাষ থেকে। এখন দেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে মাছ চাষ নিছক একটি পেশা নয়, বরং এক নীরব বিপ্লবের মাধ্যমে এটি গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় এবং চাষকৃত মাছ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক হ্যাচারির সম্প্রসারণ, মানসম্মত খাদ্য শিল্পের বিকাশ এবং সরকারের দূরদর্শী নীতি এই সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গত এক যুগে মাছ উৎপাদন প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এর বড় অংশ এসেছে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও কৃষকদের দোরগোড়ায় উন্নত পদ্ধতি পৌঁছানোর কারণে। আইপিআরএস (International Pond Recirculation System), খাঁচায় চাষ, ট্যাংকি চাষের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন কম জায়গায় বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণেই নয়, বৈশ্বিক মৎস্য উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।
উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ১৩ লাখ টনের মতো মাছ ধরা হয়েছে, যার বড় একটি অংশই ইলিশ। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে শীর্ষে এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে এশিয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এই সাফল্য দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত হাজারো উদ্যোক্তা মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুন প্রাণ দিচ্ছেন।
এই সাফল্যের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির প্রসার কম জলাশয়েও অধিক উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে রুই, কাতলা, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো মাছ একসঙ্গে চাষ করে অনেক খামারি লাভবান হচ্ছেন। বড় নদী ও জলাশয়ে খাঁচা পদ্ধতি ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে, আবার সীমিত জায়গায় ট্যাংকিতে মাছ চাষ করে পরিবারভিত্তিক আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে হরমোন উদ্দীপনার মাধ্যমে খাঁটি ও মানসম্মত পোনার সহজলভ্যতা নিশ্চিত হওয়ায় উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে।
এই খাতের সাফল্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ মৎস্যচাষ ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত, যাদের মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ নারীও সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এভাবে মৎস্য খাত শুধু আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে না, বরং নারীর ক্ষমতায়নেও অবদান রাখছে।
এক সময় দেশের মাছের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরবরাহ হতো নদী, হাওর ও প্লাবনভূমি থেকে। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক উৎসের উৎপাদন প্রায় একই থাকলেও এর অংশ নেমে এসেছে মাত্র ২৮ শতাংশে। চাহিদার বাকি অংশ পূরণ হচ্ছে খামারভিত্তিক চাষ থেকে, যা বাংলাদেশের মাছ চাষের বিপ্লবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
মাছ চাষ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতেও বড় ভূমিকা রাখছে। চাষিরা লাভবান হয়ে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে পারছেন, জমি কিনছেন, বাড়ি তৈরি করছেন এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছেন। নারী উদ্যোক্তারাও এই খাতে এগিয়ে এসেছেন, যা মৎস্য শিল্পকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছে।
সাফল্যের বাস্তব উদাহরণও রয়েছে। যেমন-বরিশালের সফিকুল ইসলাম লিজ নেওয়া কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। তার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিশ্রমের ফলে তিনি লাভবান হন এবং সেই টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি ও জমি কিনে নিজের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করেছেন। তার এই সাফল্য মৎস্য চাষিদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে নারী উদ্যোক্তা লাভলী ইয়াসমিন অল্প পরিসরে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। আজ তার খামারে ৮ একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে এবং তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ২০ জন বেকার নারী ও পুরুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে। লাভলী ইয়াসমিনের এই সাফল্য অন্যান্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায় মাছ চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের এক নির্ভরযোগ্য খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই সাফল্যকে আরও টেকসই করতে হলে নিরাপদ চাষাবাদ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অ্যান্টিবায়োটিকের নিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন অতীব জরুরি।
সমস্যা সমূহ: তবে এই সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি নীরব সংকট, অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহার। অধিক উৎপাদনের চাপের কারণে অনেক চাষি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে ও অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহার করছেন। এর ফলে মাছের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ জমা হচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সমস্যার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব। অধিকাংশ চাষি অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না, কারণ তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেই। একই সঙ্গে রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে চাষিদের মধ্যে তথ্যের অভাবও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রায় ৮৮ শতাংশ চাষি অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অবগত নন, আর ৭২ শতাংশ চাষি তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নন। সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব, তথ্যের অভাব এবং নীতিমালার স্পষ্টতার অভাবে এই সমস্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক চাষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বা অপ্রশিক্ষিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন, যা স্বল্পমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করলেও দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক।
এছাড়া মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপর কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এর ফলে অনেক চাষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া বা অপ্রশিক্ষিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে, কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণু সৃষ্টি হচ্ছে, যা জলজ পরিবেশের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে সাধারণ চিকিৎসার কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
আমাদের করণীয়: বাংলাদেশে মাছ চাষকে টেকসই ও নিরাপদ রাখার জন্য এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এই ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি। কারণ সঠিক নীতিমালা ছাড়া এই খাত দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।
খামারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, যাতে তারা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি, এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি এবং নিরাপদ বিকল্প সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রশিক্ষণের অভাবে চাষিরা ভুলভাবে রাসায়নিক ও ওষুধ ব্যবহার করছেন, যা সমাধান করতে হলে গ্রামীণ পর্যায়েও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
একই সঙ্গে বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। যেমন: প্রোবায়োটিক বা প্রাকৃতিক উপাদানভিত্তিক চিকিৎসা, পানির মান নিয়ন্ত্রণের উন্নত কৌশল এবং উন্নত মানের খাবার ব্যবহার। তবে বাজারে ভেজাল প্রোবায়োটিক ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, যাতে চাষিরা প্রতারিত না হন এবং নিরাপদ পদ্ধতিগুলো সত্যিকারের সুফল দিতে পারে।
এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে মাছ চাষ খাত শুধু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে নয়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও টেকসই ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।
বাংলাদেশের মাছ চাষ খাত নিঃসন্দেহে এক বিশাল সাফল্যের গল্প। এই খাত দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তায় যে অবদান রাখছে তা বিশ্ব স্বীকৃত। তবে এর আড়ালে অ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিকের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার এক নীরব সংকট তৈরি করছে, যা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুতর হুমকি। এখন সময় এসেছে এই খাতকে শুধু উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে নয়, বরং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উৎপাদনের দিক থেকেও নতুনভাবে ভাবার।
সরকারি নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর ভূমিকা, গবেষণার প্রসার এবং চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরতা কমানো সম্ভব। পাশাপাশি প্রোবায়োটিক ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। সঠিক পদক্ষেপ এখনই না নিলে এই সাফল্যের ধারাই ভবিষ্যতে সংকটে রূপ নিতে পারে। মাছ চাষের এই উজ্জ্বল অর্জনকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে নিরাপদ উৎপাদন নিশ্চিত করা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করাই হতে হবে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার।