‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ৫০টিরও বেশি বড় জাহাজ কিনেছে ১৮টি দেশ। রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি) জানায়, দেশের রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণশিল্পে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
দেশে ১২টি রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বড় আকারের প্রতিষ্ঠান দুটি। এগুলো হলো আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। বিদেশে রপ্তানি হওয়া জাহাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বড় জাহাজ রপ্তানি করেছে এই দুটি প্রতিষ্ঠান।
২০০৮ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ড জার্মানির স্টেলা শিপিং কোম্পানির কাছে প্রথম সমুদ্রগামী বহুমুখী পণ্য পরিবহনের উপযোগী জাহাজ ‘এমভি স্টেলা ম্যারিস’ রপ্তানি করে। এরপর জাহাজ রপ্তানিতে যুক্ত হয় চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। ২০০৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ৫০টি বড় জাহাজ রপ্তানি করেছে।
এক সেমিনারে আইবিএফবির পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমরা ভারত, ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে দরকার কৌশলগত নীতি এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক সহযোগিতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজশিল্প থেকে আরও বড় পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তবে এ খাতের উন্নয়নে ৫০ লাখ ডলারের তহবিল দরকার। পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন দেওয়া এবং জাহাজ রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন। এতে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সহজ হবে।’
প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর আনন্দ শিপইয়ার্ড আবার জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছে। তুরস্কের জন্য নির্মিত ৫ হাজার ৫০০ ডেডওয়েট টন ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক মাল্টিপারপাস ভেসেল ‘ওয়েস ওয়্যার’ গত ৮ সেপ্টেম্বর হস্তান্তর করা হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনাঘাট কারখানায় এটি তুরস্কের নোপ্যাক শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইঞ্জিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ৬১০০ ডেডওয়েট টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জাহাজ রপ্তানি করেছিল। তখন সেটি ছিল বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত অন্যতম বৃহৎ জাহাজ।
আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল্লা হেল বারী বলেন, ‘২০২২ সালের পর আমরা আবার জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছি। এবার তুরস্কে যে জাহাজ যাচ্ছে সেটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে আধুনিক। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নির্মিত এই ভেসেল ‘ওয়েস ওয়্যার’-এ আধুনিক নকশা ও প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৩৪১ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট ও গভীরতা ২৫ ফুট। এটি ইস্পাতের কয়েল, কয়লা, সার, খাদ্যশস্যসহ বিপজ্জনক সামগ্রী বহনের উপযোগী।’
চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডও দুই বছর পর আবার জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রায়ান’ নামের নতুন জাহাজ রপ্তানি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ডিজিএম শাহিদুল বাশার বলেন, ‘এমভি রায়ান জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার ও গভীরতা সাড়ে চার মিটার। এরপরও আমরা আরও বড় জাহাজ রপ্তানি করেছি। ধাপে ধাপে আরও সাতটি জাহাজ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করব। এ পর্যন্ত আমরা ১২টি দেশে ৩৪টি জাহাজ রপ্তানি করেছি। এ জাহাজগুলোর মোট মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।’