বিশ্ববাজারে ২০০৮-০৯ সালের পর স্পট মূল্যে আকরিক লোহার অস্থিরতা কমে এসেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে পণ্যের দাম স্বল্পসীমার মধ্যে ওঠানামা করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইনভেস্টিং ডটকমের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
শিল্প সূত্র বলছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে আকরিক লোহা টনপ্রতি গড়ে ১০০ ডলারে লেনদেন হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন দাম ছিল ৯০ ডলার এবং সর্বোচ্চ ১১০ ডলার। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের গবেষকরা মনে করেন, চীনের ক্রয়নীতি পরিবর্তন এবং আকরিক লোহার বাজারে সরবরাহ-চাহিদার ভারসাম্য দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে গঠিত চায়না মিনারেলস রিসোর্সেস গ্রুপ (সিএমআরজি) বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। সংস্থাটি চীনের অর্ধেকের বেশি ইস্পাত উৎপাদনকারীর হয়ে বৈশ্বিক খনি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এর ফলে ক্রয়, মূল্য নির্ধারণ ও কৌশলগত মজুদ ব্যবস্থাপনায় একক প্রভাব তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রেতাদের এই সম্মিলিত ক্ষমতা স্বল্পমেয়াদি লেনদেন কমাচ্ছে। তাই দামের ওঠানামা সীমিত হয়েছে।
গত সপ্তাহে আকরিক লোহা টনপ্রতি প্রায় ১০৫ ডলারে লেনদেন হয়েছে। চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ শেষের পর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরেছে। নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমার প্রত্যাশা বাজারকে সমর্থন করেছে। বাজার সূচকের তথ্য অনুযায়ী, চীনের বন্দর ও কারখানায় আকরিক লোহার মজুদ স্থিতিশীল আছে। চলতি বছর ব্রাজিলের চালান ৩ শতাংশ বেড়েছে। আগস্টের শুরুর দিকে চীনে ইস্পাত উৎপাদনও বেড়েছে।
মাইস্টিলের হিসাব অনুযায়ী, চীনে ইস্পাত ব্যবহার অপরিবর্তিত। তবে পুরো বছরের ইস্পাত রফতানি প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ টনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক বাওস্টিল বলছে, ২০২৫ সালেও রফতানি ১০ কোটি টনের ওপরে থাকতে পারে, যদিও বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। ডালিয়ান এক্সচেঞ্জে নেট কনট্রাক্ট ২০ লাখ টন ঋণাত্মক হওয়ায় বাজারে সতর্কতার ইঙ্গিত মিলছে। ইউবিএস বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্যাল, রিও টিন্টো ও বিএইচপির শেয়ার স্থিতিশীল রাখা হলেও ফোর্টেস্কু মেটালস গ্রুপ ও কেওআইওর শেয়ার বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান আকরিক লোহার কম অস্থিরতা হয়তো নতুন স্বাভাবিক হতে পারে। এতে ইস্পাত উৎপাদনকারীরা খরচের হিসাব ভালোভাবে করতে পারবে। তবে দ্রুত লাভের জন্য লেনদেনকারীদের সুযোগ কমে যাবে। ফলে আকরিক লোহার দাম এখন স্বল্পমেয়াদি ওঠানামার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রভাবের ওপর বেশি নির্ভর করছে।