বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি গুগলের মালিক অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (৬.৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী দুই বছরে এই অর্থ ব্যবহার হবে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য।
এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যাচ্ছেন। সফরের আগেই একে ধরা হচ্ছে বিশাল মার্কিন বিনিয়োগের প্রথম ধাপ হিসেবে।
মঙ্গলবার চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে হের্টফোর্ডশায়ারের ওয়েলথাম ক্রসে গুগলের এক বিলিয়ন ডলারের নতুন ডাটা সেন্টার। নতুন বিনিয়োগে শুধু এই সাইট বিস্তৃতই হবে না, বরং লন্ডনভিত্তিক ডিপমাইন্ডকেও আরও অর্থায়ন করা হবে। ডিপমাইন্ডের নেতৃত্বে আছেন ব্রিটিশ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্যার ডেমিস হাসাবিস, যিনি আধুনিক বিজ্ঞানে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে কাজ করছেন।
গুগলের প্রেসিডেন্ট এবং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার রুথ পোরাট বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাজ্যে “অগ্রসর বিজ্ঞানে” কাজের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এখন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ঝুঁকি আছে, তবে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সেবা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিপুল সুযোগও রয়েছে।”
তিনি সরকারের এআই প্ল্যান এর প্রশংসা করেন, তবে জানান— “এখনও অনেক কাজ বাকি। এআই থেকে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া নিশ্চিত নয়, বরং তা অর্জন করতে হলে সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা দরকার।”
ঘোষণার আগের দিনই অ্যালফাবেটের বাজারমূল্য ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ছাড়িয়েছে। অ্যাপল, মাইক্রোসফট এবং এনভিডিয়ার পর গুগল হলো চতুর্থ কোম্পানি যারা এই পর্যায়ে পৌঁছাল। মার্কিন আদালত সম্প্রতি কোম্পানিটিকে ভাঙার নির্দেশ না দেওয়ায় তাদের শেয়ারমূল্য গত এক মাসে দ্রুত বেড়েছে।
সিইও সুন্দর পিচাই গুগলকে “AI First” কোম্পানিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। রুথ পোরাট বলেন, “এই সাফল্যই আমাদের বাজারমূল্যের মূল কারণ।”
ডাটা সেন্টারের বিদ্যুৎ খরচ ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ রয়েছে। তবে গুগল জানিয়েছে, তাদের নতুন ডাটা সেন্টার এয়ার-কুলড হবে এবং উৎপন্ন তাপ স্থানীয় স্কুল ও বাড়িঘর গরম রাখতে ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া, তারা শেল-এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে যাতে প্রায় ৯৫% কার্বন-ফ্রি এনার্জি ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ পরিচালিত হয়।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন এআই ডাটা সেন্টারের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে আবারও কার্বন-নির্ভর শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পোরাট বলেন, “আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে বাতাস সব সময় প্রবাহিত হয় না, সূর্যও সব সময় আলো দেয় না। তাই বিদ্যুৎ গ্রিড আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি।”
এআই প্রযুক্তি নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এটি তরুণদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দেবে। এ বিষয়ে পোরাট বলেন, “শুধু খরচ বাঁচাতে এআই ব্যবহার করা হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব আসবে না। তবে নতুন শিল্প খাত তৈরি হচ্ছে, যেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, চিকিৎসা, নার্সিং কিংবা রেডিওলজি খাতে এআই মানুষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, প্রতিস্থাপন করছে না।
পোরাটের মতে, “আমাদের সবার উচিত এআই ব্যবহার শুরু করা। এতে বোঝা যাবে এটি কীভাবে আপনার কাজে সহায়তা করতে পারে। বাইরে দাঁড়িয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”