অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে বেকারের সংখ্যা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে কর্মসংস্থান এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এটি মূলত বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্য যদি মন্থর হয়, তার প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়ে। তিনি জানান, ব্যবসা কিছুটা মন্থর ছিল, এখন তা ধীরে ধীরে ভালো অবস্থায় ফিরছে। এনবিআরের ট্যাক্স রাজস্ব বাড়ছে এবং কর ফাঁকি দেওয়া অর্থও উদ্ধার করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, বৈঠকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি আমদানি এবং এমওপি ও ইউরিয়া সার অনুমোদন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘জেনারেশন যাই হোক, উপকেন্দ্রগুলো ফল্টি হলে সিস্টেম ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্যা দেখা দেয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন উপকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এলএনজি আমদানিতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমদানি শুল্ক বাড়ানো বা না বাড়ানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি মোটামুটি স্বস্তিদায়ক। আমাদের ঘাটতি ছিল ৭.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার।’
আমেরিকা থেকে পণ্য আনলে খরচ বেড়ে যাবে কি না—এর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছুটা অবশ্যই বেড়ে যাবে। যেমন গমের ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য বেশি হবে, কিন্তু মান ভালো। আমরা ট্যারিফ এভোয়েড করতে এবং ঘাটতি কমাতে চাই।’ ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। ভর্তুকি দিয়ে আমরা বিভিন্ন খাতে সরবরাহ নিশ্চিত করছি। বাস্তবায়ন কীভাবে হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়লেও এখনও বিশেষ প্রভাব দেখা দেয়নি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। তার ভাষায়, ‘পাইকারি ও খুচরা বাজার আমাদের অর্থনীতির ধারা ছাড়িয়ে গেছে, যা অন্যান্য দেশে সাধারণত হয় না। তবে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সম্প্রতি কমেছে।’
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি পুনরায় বলেন, ‘এটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর হলে তার প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়ে। তবে বর্তমানে ব্যবসা কিছুটা ভালো অবস্থায় ফিরেছে।’ সরকারের উদ্যোগ নিয়ে তিনি জানান, স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে একটি প্রকল্পে হাইটেক প্রযুক্তি ব্যবহার না করে রাস্তা প্রশস্ত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এলএনজি আমদানিতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করি। আমেরিকা, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—সব বাজার তুলনা করা হয়। সহজভাবে আমেরিকার হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। পিটার হাসের কোম্পানিও আমাদের কাছে পরিচিত নয়।’
সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে অভিযোগ ওঠলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। মূল দায়িত্ব কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের। আমরা আরও নজর রাখব।’ রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।’