জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশসহ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা দেশগুলোর প্রস্তুতি যাচাই করতে প্রতিবেদন চাইছে। বাংলাদেশকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট সিডিপির চেয়ারম্যান হোসে অ্যান্টোনিও ওকাম্পো বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠান। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের একজন প্রতিনিধি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ওই বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন। সভার এজেন্ডা, তারিখ ও অংশগ্রহণকারীর তালিকা পরে জানানো হবে।
প্রস্তুতির অবস্থা জানাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন তৈরি করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সিডিপির কাছে পাঠানো হবে। তবে এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিষয়ে এখনও সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেনি। ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এলডিসি উত্তরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘এলডিসি উত্তরণে অনীহা জানানোর জন্য কি কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ আছে? আমাদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পণ্য রপ্তানিতে সব দেশের জন্য শ্রমমান, পরিবেশসহ বিভিন্ন সূচকের একই মানদণ্ড ঠিক করছে। তাই দেশের উন্নয়ন টেকসই করতে জ্বালানি, করব্যবস্থা ও লজিস্টিক ঠিক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
দীর্ঘ আট বছরের নানা প্রক্রিয়ার পর ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, প্রস্তুতি কম থাকায় উত্তরণ আরও পাঁচ-ছয় বছর পিছিয়ে দেওয়া উচিত। এ কারণে তারা প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিতে পারেন। সিডিপি বিশ্বের এলডিসি উত্তরণের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে। দোহা প্ল্যান অব অ্যাকশনের আওতায় অ্যানহ্যান্সড মনিটরিং মেকানিজম (ইএমএম) বাস্তবায়ন করে তারা। উত্তরণপ্রক্রিয়ায় থাকা দেশগুলো তাদের বিদ্যমান নীতি ও মসৃণ উত্তরণের কৌশল (এসটিএস) অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ৬৭/২২১ অনুযায়ী, এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায় থাকা দেশগুলো প্রতিবছর সিডিপিকে তাদের প্রস্তুতির অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়। প্রথম তিন বছরে বার্ষিক প্রতিবেদন, এরপর প্রতি তিন বছর একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। সিডিপির সদস্য দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘গত ২৫ আগস্ট সিডিপির চেয়ারম্যান বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চিঠি দিয়েছেন। এতে এসটিএস বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ বৈঠক হতে পারে। এতে দেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ সিডিপিকে যে প্রতিবেদন দেবে, তা ভবিষ্যতে উত্তরণ স্থগিতকরণের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে অত্যন্ত ভেবে। আন্তর্জাতিক সমর্থন ও শক্তিশালী প্রমাণ থাকা আবশ্যক। ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে প্রথমে।’
বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে এলডিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। উত্তরণের তিনটি মানদণ্ড আছে—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, এবং জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। ২০১৮ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ এই তিনটি সূচকে উত্তীর্ণ হয়। ২০২৪ সালে উত্তরণ হওয়া সম্ভব হলেও করোনার কারণে প্রস্তুতির জন্য দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যদি উত্তরণ সম্পন্ন করে, এটি হবে প্রথম দেশ যা তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে এলডিসি থেকে বের হবে।

