সঞ্চয়পত্র কেনার কথা ভাবলেই প্রথমে ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ মনে আসে। এটি মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। মাসে মাসে মুনাফা তোলা যায়। তা ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি। পরিবার সঞ্চয়পত্র গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ২০০৯ সালে এটি প্রবর্তন করা হয়।
এবার দেখা যাক, কেন এটি এত বেশি কেনা হয়—
১. উচ্চ মুনাফা: পরিবার সঞ্চয়পত্রে অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের তুলনায় বেশি মুনাফা দেওয়া হয়। মুনাফা দুই ভাগে বিভক্ত।
- সাড়ে ৭ লাখ টাকার পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে ৫ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১.৯৩%।
- সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি হলে মেয়াদ শেষে মুনাফা ১১.৮০%।
২. ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা: এটির মুনাফার হার ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি। ভালো ব্যাংকে এখন সাধারণত ১০% এর আশপাশে সুদ থাকে। কিছু ব্যাংক ১০% এর বেশি সুদ দেয়, তবে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩. নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা: ১৮ বছরের বেশি যে কোনো নারী পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারী-পুরুষও এটি কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একক নামে কিনতে পারবেন।
৪. নিরাপত্তা: সরকারি গ্যারান্টি থাকায় মূলধন হারানোর ঝুঁকি নেই। বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত থাকে। বেসরকারি দুর্বল ব্যাংকে এফডিআর করলে কখনও প্রয়োজনের সময় টাকা না পাওয়া গেছে, কিন্তু এখানে এমন ঝুঁকি নেই।
৫. নিয়মিত আয়: মুনাফা প্রতি মাসে তোলা যায়। তাই অনেকেই এটিকে মাসিক আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। পরিবারের খরচে এটি কাজে লাগে।
৬. কর–সুবিধা: নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে উৎসে কর কেটে নেওয়া হয়।
- ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগে ৫% কর।
- ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ১০% কর।
এই কর মুনাফার ওপর বসে। এছাড়া বিনিয়োগ দেখিয়ে বার্ষিক কর রেয়াতও পাওয়া যায়।
৭. মধ্যবিত্ত ও গৃহিণীদের জন্য উপযোগী: ঝুঁকিমুক্ত ও নিশ্চিত মুনাফা থাকায় এটি মধ্যবিত্ত ও গৃহিণীদের কাছে জনপ্রিয়। চিকিৎসা খরচসহ বিভিন্ন বিপদে এটি সাহায্য করে।
৮. সহজে কেনা যায়: জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে কেনা ও ভাঙানো যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। অন্য কাগজপত্র প্রয়োজন নেই।
৯. অগ্রিম ভাঙানো সম্ভব: প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙা যায়। তবে তখন মুনাফা কিছুটা কমে যায়।
১০. সামাজিক সুরক্ষা: পরিবারকে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য। অর্থনীতির ভাষায় এটি আর্থিক পণ্য হলেও বাস্তবে অনেকের জন্য সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।

