টানা কয়েক মাস কমার পর চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশের ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা গতি পেয়েছে। জুলাই শেষে আমানতের বৃদ্ধি প্রায় ৮.৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
এর আগে জুনে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৭.৭৭ শতাংশে নেমেছিল। তবে জুলাই শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৪২ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮.৮০ লাখ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের একই মাসে এটি ছিল ১৭.৩৪ লাখ কোটি টাকা।
প্রবৃদ্ধি এখনও এক অঙ্কের হলেও ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা এটিকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে খাতটি আমানত সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছিল। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১০.৪৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যায়।
ব্যাংক খাতে আমানতের সামান্য বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার কমে যাওয়ায় সেই অর্থ ব্যাংকে এসেছে। তিনি বলেন, “ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার কমার কারণে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। কিছু ব্যাংক তারল্য বাড়ানোর জন্যও চেষ্টা করেছে। ফলে তাদের আমানত আগের চেয়ে বেড়েছে।”
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তুলনা করলে আমানতের বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে নেওয়া নানা সংস্কারের কারণে আমানত কিছুটা বাড়ছে।
তিনি জানান, “ব্যাংক একীভূত হওয়ার সময় অনেকেই টাকা উঠিয়ে নিয়েছিল। তখন ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপের কারণে গ্রাহকের আস্থা ফিরছে। ফলে আমানত বাড়ছে।”
মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, রেমিট্যান্সের ভালো গতি অর্থনীতিতে টাকার সঞ্চালন বাড়িয়েছে। “মানুষ যদি ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখে, তখন অনেক পরিবার টাকা ব্যাংকে রাখে। মাঝখানে আস্থার সংকট থাকলেও ধীরে ধীরে আস্থা ফিরছে।”
এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, “সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরা, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব ব্যাংকিং খাতে আমানত বৃদ্ধিতে দেখা যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমায় ব্যাংক আমানত আরও আকর্ষণীয় হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ও উদ্ভাবনী পণ্যও আমানত প্রবাহ বাড়িয়েছে।”
তিনি আরও জানান, জুনে করবর্ষ শেষ হওয়া, অর্থনীতির কিছু অংশের আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে আসা এবং সরকারি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ব্যাংকে জমা দেওয়াও এই বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
তৌহিদুল বলেন, “এনআরবিসি ব্যাংক দেশব্যাপী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের (CASA) আমানত সংগ্রহ করছে। গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিয়ে আমরা এই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তথ্য বলছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থাকা অর্থের পরিমাণ কমেছে। জুলাইয়ে এটি ছিল ২.৮৭ লাখ কোটি টাকা, জুনে ছিল ২.৯৬ লাখ কোটি টাকা। এক মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা অর্থ কমেছে ৯ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ব্যাংকে আস্থা ফেরার কারণে কিছু টাকা ব্যাংকে এসেছে। তবে সব অর্থই ব্যাংকে আসে না; অন্য খাতেও বিনিয়োগ হয়।”