কোম্পানি আইনের সঙ্গে মিলছে না বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ২০২৫। পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ, সভায় উপস্থিতি, শূন্য পদ পূরণ ও চাঁদা নির্ধারণ সব কিছু নিয়েই মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, নতুন বিধিমালা মানতে গেলে কোম্পানি আইনই লঙ্ঘিত হবে।
দুই বছর আলোচনার পর অন্তর্বর্তী সরকার গত ২২ মে বিধিমালাটি প্রণয়ন করে। কিন্তু শুরু থেকেই চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলো আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, বিধিমালা কোম্পানি আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, “কোম্পানি আইন মেনেই আমরা এত বছর চেম্বার পরিচালনা করেছি। অথচ নতুন বিধিমালা তা ভঙ্গ করছে। তাই আমরা সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। আশা করি সরকার বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে।” এমসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) ইতিমধ্যে লিখিতভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সংশোধনের দাবি তুলেছে।
এত দিন আপত্তি আমলে না নিলেও এবার অবস্থান বদলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “বিধিমালার কিছু ধারা অসংগতিপূর্ণ হয়েছে। আপত্তিগুলো আমরা শুনব এবং আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধনের পদক্ষেপ নেব।”
পর্ষদের মেয়াদ: বিধিমালায় পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস করা হয়েছে। অথচ এমসিসিআইয়ের দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী মেয়াদ তিন বছর। প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক অবসরে যান। ব্যবসায়ীদের মতে, নতুন ধারা কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সভায় উপস্থিতি: বিধিমালায় বলা হয়েছে, বার্ষিক বা বিশেষ সাধারণ সভায় বৈধ সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ উপস্থিত থাকলেই কোরাম পূর্ণ হবে। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, বৃহৎ সদস্যসংখ্যার সংগঠনে এটি প্রায় অসম্ভব। কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংঘবিধি মেনে চলাই বাস্তবসম্মত।
শূন্য পদ পূরণ: এখন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, পরিচালনা পর্ষদের কোনো পদ শূন্য হলে পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত তা শূন্য রাখা যায়। এতে অতিরিক্ত নির্বাচন খরচ এড়ানো যায়। কিন্তু নতুন বিধিমালায় উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, যা সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
চাঁদার হার: বিধিমালায় ফেডারেশনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কে এককালীন ও বার্ষিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএপিএলসির মতে, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের আর্থিক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। এ কারণে ধারা বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
বিএপিএলসির সভাপতি ও বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, “বিধিমালাটি না ভেবে করা হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে অসংগতিগুলো জানিয়েছি। আশা করছি সরকার দ্রুত সংশোধন করবে।

