দেরিতে হলেও এবার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নজর দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্তর্বর্তী সরকারের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংস্থাটি দুর্নীতির সুযোগ কমিয়ে রাজস্ব আদায়কে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য রাখার চেষ্টা করছে। সংস্থার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্তর অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করা হয় এবং প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং শতাধিক কর্মকর্তা এখনো অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন। দুদকের তদন্তেও এনবিআর সরাসরি সহযোগিতা করছে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব দপ্তরে রদবদল চলছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১,৮০০ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি কোম্পানির ২৯৯ কোটি টাকার আয়কর মাত্র ৩৩ কোটি টাকায় কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুই কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন।
এনবিআরের গোয়েন্দা তদন্তে জানা গেছে ওই অনিয়মের বিনিময়ে কর্মকর্তারা ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ১৫ সেপ্টেম্বর বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে এবং অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে ১৪ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কর অঞ্চল-৫’র সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই কর্মকর্তা ঘুষগ্রহণের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। উদ্দেশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ এনবিআর গঠন করা যাতে সব শ্রেণির করদাতার আস্থা শক্ত হয়।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘দুর্নীতি রোধের একমাত্র উপায় হলো কঠোর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া। যদি রোগ আছে তা চিহ্নিত করেও ওষুধ না দেয়া হয় সমস্যা জটিল হবে তাই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ নীতিনির্ধারণী পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে একই স্থানে দীর্ঘ সময় থাকা কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রভাব ও স্বার্থগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত হয়ে অনিয়মের সুযোগ বাড়াতে পারে এবং গোষ্ঠীভিত্তিক প্রভাব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দেয়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে ব্যাপক বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যার মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ও কাজের গতি বাড়ানো।
দুদকও এনবিআরের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করফাঁকির অভিযোগে এবং দুদকের চাওয়া প্রয়োজনীয় নথি এনবিআর সরবরাহ করছে। তবে এসব সাময়িক শাস্তি যথেষ্ট নয় বলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘একজন ঘুষখোরকে চাকরিতে রাখার কোনো যুক্তি নেই। চোরকে থাপ্পড় মেরে চুরি বন্ধ হয় না। তাই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ শিরোনাম: এনবিআরে শৃঙ্খলা অভিযান জোরদার: বদলি ও তদন্তে কড়া মনোভাব